গ্রাম-গঞ্জ-শহর
সাতকানিয়ায় জামায়াতের দুই কর্মী হত্যার ঘটনায় মামলা
আসামী আওয়ামী লীগ নেতা মানিকসহ ৪৭জন
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় ডাকাতির গুজব রটিয়ে দুই জামায়াত কর্মীকে গুলী, পিটিয়ে ও কুপিয়ে নির্দয়ভাবে হত্যার ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার রাতে নিহত আবু ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে
Printed Edition
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় ডাকাতির গুজব রটিয়ে দুই জামায়াত কর্মীকে গুলী, পিটিয়ে ও কুপিয়ে নির্দয়ভাবে হত্যার ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার রাতে নিহত আবু ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও আওয়াম ীলীগের মনোনয়নে রাতের ভোটের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক ও খুনি হিসেবে তার ভাই যুবলীগ নেতা হারুন, মমতাজ ও কামরুলসহ ৪৭ জনের নাম উল্লেখসহ ১০/১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে মামলার এজাহারে। সাতকানিয়া থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ছনখোলা এলাকায় নিহত আবু ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আমরা এই হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছি।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, আবু ছালেক জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী এবং ২৪-এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনের মামলা-হামলা ও জুলুম-নির্যাতনের কারণে দীর্ঘদিন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপনে ছিলেন। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বাড়িতে ফিরে আসেন। আবু ছালেক এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক বিরোধ মীমাংসা করাসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কে বা কারা এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকার জনৈক আব্দুল নুরের মালিকানাধীন একটি সিএনজি অটোরিকশা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ বিষয়ে আব্দুল নুর আবু ছালেক ও তার বন্ধু নেজাম উদ্দিনকে অবহিত করলে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিন সিএনজি অটোরিকশা পোড়ানোর বিষয়টি আব্দুল নুরসহ এলাকার গণ্যমান্য লোকজন নিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিকালে এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় একটি সালিশ বৈঠক করেন। ওই সালিশ বৈঠকে আব্দুল নুরের গাড়িতে কারা আগুন লাগিয়েছে তা শনাক্ত হয়। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের সিএনজির ক্ষতিপূরণ বাবদ সাত লাখ টাকা দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, জনৈক আব্দুল নুর ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় ওইদিন সালিশ বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ওই ঘটনার বিষয়ে পরবর্তীতে ০৩ মার্চ রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার সময় ছনখোলা এলাকার পুনরায় একটি সালিশ বৈঠক হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের কয়েকজন ৩ মার্চ সন্ধ্যায় আবু ছালেক ও তার বন্ধু নেজাম উদ্দিনকে সিএনজি পোড়ানোর ঘটনায় শনাক্তকৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা উদ্ধার করে দেয়ার কথা বলে ছনখোলা পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে রাস্তার ওপর যাওয়ার জন্য বলে। ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার সময় ছালেক ও তার বন্ধু নেজামসহ আরও নয়জন সিএনজিযোগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তখন তারা ঘটনাস্থলের পাশে থাকা জনৈক হারুনের চায়ের দোকানে বসে সিএনজি পোড়ানোর ক্ষতিপূরণের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। যুবলীগ নেতা হারুন, মমতাজ, কামরুলসহ আরো বেশ কয়েকজন এসে আলোচনা করার একপর্যায়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী ছনখোলা পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে গুজব ছড়িয়ে এলাকার স্থানীয়দের উসকে দিয়ে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে হারুনের চায়ের দোকান থেকে বের করে রাস্তার বিপরীত পাশে একটি টিনের ঘরে নিয়ে মারধর শুরু করে। রাম দা, ছুরি, চাইনিজ কুড়াল ও ধারালো কিরিচ দিয়ে নেজাম উদ্দিনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় রাস্তার পাশে থাকা ইট দিয়ে নেজাম উদ্দিনকে মুখের ওপর উপর্যুপরি আঘাত করে। একপর্যায়ে নেজাম উদ্দিনের গলায় পা-চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, নেজাম উদ্দিনের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর একই কায়দায় আবু ছালেককে রাস্তার ওপর এনে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় কয়েকজন ধারালো চুরি দিয়ে আবু ছালেকের জিহ্বা কেটে দেয়। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পিস্তল দিয়ে গুলী করে। আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় এলোপাতাড়ি গুলী করলে স্থানীয় ৫ জন গুরুতর আহত হয়। যাওয়ার সময় পিস্তলটি নেজাম উদ্দিনের লাশের পাশে রেখে যায়। সংবাদ পেয়ে সাতকানিয়া সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন পারভেজের নেতৃত্বে সেনা সদস্য ও থানার ওসি জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনের সুরতহাল করেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সাতকানিয়া থানার ওসি মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, থানায় মামলা হয়েছে। এখন মামলা তদন্ত ও আসামীদের গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করবো। এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম উদ্দিনের স্ত্রী আরজু আক্তার বলেন, আমার স্বামী আওয়ামী লীগের নির্যাতনে ঘর ছাড়া হয়ে ১৭ বছর কাটিয়েছেন। এলাকায় এসেছেন মাত্র সাত মাস। আর এই সাত মাসের মাথায় আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে।