গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে ৩ টি বিরল প্রজাতির আফ্রিকান লেমুর চুরির ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে একের পর এক মূল্যবান প্রাণী চুরির ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পরিবেশবাদীরা।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানায়, গত ২৩ মার্চ দিবাগত রাতে পার্কের লেমুর বেষ্টনী থেকে একটি প্রাপ্তবয়স্ক ও দুটি শাবকসহ তিনটি লেমুর চুরি হয়। তারের প্রাচীর কেটে রাতে অন্ধকারে কে বা কারা লেমুর গুলো নিয়ে যায়। পরে আমরা আশ পাশের সম্ভাব্য স্থানে খোঁজ করেছি। পরে ২৪ মার্চ এ ঘটনায় থানায় সাধারণরা ডায়েরি করা হলেও এখনো পর্যন্ত তদন্তে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের কাছ থেকে ২০২ জোড়া বিপন্ন পাখি ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে ছিল দুটি লেমুর।
উদ্ধারকৃত এসব প্রাণী পরে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের মাধ্যমে সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়। সেখানেই প্রথমবারের মতো লেমুর জোড়াটি বাচ্চা দেয়। ২০২২ সালে একটি লেমুর মারা গেলে বাকি তিনটি থাকছিল পার্কে। সর্বশেষ এই তিনটিই চুরি যাওয়ায় এখন পুরো বেষ্টনী শূন্য।
বন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে সারা দেশে আর কোনো লেমুর অবশিষ্ট নেই। অর্থাৎ, এই চুরির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে লেমুরের অস্তিত্ব পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেল।
পার্কের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকেই সাফারি পার্কে একের পর এক প্রাণী চুরি ও অব্যবস্থাপনার ঘটনা ঘটছে। গত বছর নভেম্বরে দুটি ম্যাকাও পাখি চুরি হয় এবং চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি একটি নীলগাই নিখোঁজ হয়। এসব ঘটনায় বন বিভাগের কয়েকজন কর্মচারীর সম্পৃক্ততার সন্দেহ থাকলেও কোনো তদন্তে কাউকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, "তিনটি লেমুর চুরির ঘটনা তদন্তাধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।"
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, সাফারি পার্কের মূল্যবান প্রাণীগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, জবাবদিহিমূলক তদন্ত ও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।