গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা : গোমস্তাপুরসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটিতে যেন এক বিশেষ মায়া আছে। এই মাটিতেই আমের রাজ্য গড়ে উঠেছে, আর এখন ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে আরেক সোনালি সম্ভাবনাÍ কলা চাষ। জেলার নানা প্রান্তে আজ সবুজ পাতার ছায়ায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য কলা গাছ; আর সেই গাছের নিচে ঘামের ফোঁটা ফোঁটা ঝরিয়ে কৃষকরা গড়ে তুলছেন পরিবারের হাসি।
নাচোল, গোমস্তাপুর, শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলায় এখন ব্যাপকভাবে কলা চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে শবরপুর, রহনপুর ও নাচোল আড্ডা অঞ্চলে কৃষকরা প্রচলিত ধান বা পাটের জায়গায় কলাকে বেছে নিচ্ছেন। মাটির প্রকৃতি, আবহাওয়া আর সহজ ব্যবস্থাপনার কারণে এই অঞ্চলে কলা চাষ বেশ ফলপ্রসূ। এক একর জমিতে বছরে দুইবার পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়- যা কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক তরুণ কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “আগে ধান চাষে লাভ কম ছিল, এখন কলা চাষে আয় দ্বিগুণ। খরচ কম, পরিশ্রম তুলনামূলক সহজ, আর বাজারে চাহিদা বেশি।”
বর্তমানে স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে এই কলা যাচ্ছে রাজশাহী, নাটোর, এমনকি ঢাকার পাইকারি বাজারেও। এক একর জমিতে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ কলা গাছ লাগানো হয়, আর প্রতি গাছেই ফলন হয় গড়ে ২৫-৩০ কেজি পর্যন্ত। প্রতি একরে খরচ হয় প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা, কিন্তু আয় আসে ৮০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত Í অর্থাৎ, কলা এখন শুধু ফসল নয়, কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার।
বসন্তের হাওয়ায় দুলে ওঠা কলাগাছের পাতা, বর্ষায় নরম বৃষ্টির ধারা- সব মিলিয়ে এই ফসল যেন এক জীবন্ত চিত্রকর্ম। যখন কলার থোড় বের হয়, কৃষকের চোখে দেখা যায় এক অদ্ভুত উজ্জ্বলতা। সেই থোড় যখন ফুলে ফুলে সোনালি রঙ নেয়, তখন গোটা ক্ষেত যেন নতুন জীবনের জন্মের সাক্ষী হয়।
সব সাফল্যের মাঝেও আছে সংগ্রাম। মাঝে মাঝে ঝড়-বৃষ্টি, পোকামাকড়ের আক্রমণ, আর বাজারের অস্থিরতা কৃষকদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। তবুও তারা হাল ছাড়েন না। প্রতিটি গাছের যত্ন, পানি দেওয়া, পাতা ছাঁটাÍ এই সব কাজেই লেগে থাকে তাদের মমতার হাত। কারণ, তাদের কাছে কলা শুধু ফসল নয়- মাটির সঙ্গে সম্পর্কের এক ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কলা চাষ আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। যদি সঠিক বিপণন ব্যবস্থা, সংরক্ষণ ও পরিবহনের সুযোগ বাড়ানো যায়, তবে এই কলা হতে পারে জেলার অন্যতম রপ্তানি সম্ভাবনাময় পণ্য।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কলাক্ষেত শুধু অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রতীক নয়, এটি এক পরিশ্রমী মানুষের গল্প- যে গল্পে ঘামের গন্ধ আছে, মাটির টান আছে, আর আছে জীবনের প্রতি গভীর ভালোবাসা। কলা গাছের পাতায় যখন সকালের রোদ ঝলমল করে ওঠে, তখন মনে হয়- এই মাটিই প্রকৃতির আশীর্বাদ, আর এই কৃষকরাই তার রক্ষক।