চট্টগ্রামে কয়েকদিন ধরে টানা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে করে জনজীবন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বিশেষ করে গতকাল সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল থেকে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের ভোগান্তি আরও প্রকট হয়ে ওঠে। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নগরীতে ৫৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা আবহাওয়াবিদদের মতে, ভারী বর্ষণের পর্যায়ে পড়ে। আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তা ‘অতি ভারী বর্ষণে’ রূপ নিতে পারে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল হক দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, “বর্তমানে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। নি¤œচাপ কেটে গেলেও এর প্রভাবে যে সক্রিয় বায়ু প্রবাহ শুরু হয়েছে, তা এখনো বিদ্যমান। আগামী দুই দিন বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। এজন্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরতদের জন্য পাহাড়ধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।”
চট্টগ্রাম শহরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যায়। বিশেষ করে কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজার, আতুরার ডিপো, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, হাজীপাড়া এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রধান সড়ক, অলিগলি এবং বাসাবাড়ির নিচতলা পর্যন্ত পানি ঢুকে পড়ে। কিছু এলাকায় পানি হাঁটু পর্যন্ত হলেও, কোথাও কোথাও কোমরসমান পানিতে রূপ নেয়। এতে করে অনেক বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জলজটের কারণে প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটে। বিশেষ করে রিকশা, টেম্পু, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল অনেক এলাকায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কর্মস্থলে যাওয়া মানুষ এবং স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্ম্মা বলেন, “আজ সকালে কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, মুরাদপুর ও আগ্রাবাদ এলাকায় পানি জমেছিল। আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নিরবচ্ছিন্নভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থার পানি অপসারণে কাজ করছেন। দুপুর নাগাদ কাতালগঞ্জ ছাড়া অন্যসব এলাকায় পানি সরে গেছে।” তবে সাধারণ মানুষ বলছেন ভিন্ন কথা। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা দেখা দিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে দুর্ভোগ যেন নিয়তিতে পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, খাল-নালা দখল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণেই চট্টগ্রামে বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, ‘মেগা ড্রেন’ প্রকল্পসহ কয়েকটি বড় উদ্যোগ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, যা শেষ হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান আসবে। তবে নগরবাসীর প্রশ্ন, প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই যদি প্রতি বছর এ দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তাহলে সেগুলোর সুফল কবে মিলবে?
বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আগামী দিনগুলোতে দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে পাহাড়ি ঢল ও সমুদ্রের জোয়ার একত্রে হলে নগরীর নি¤œাঞ্চলগুলো আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন পরিবেশ ও আবহাওয়া বিশ্লেষকরা। চট্টগ্রাম মহানগরের নাগরিকদের প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সতর্ক থাকার জন্য।