দিনাজপুর অফিস: বহুল আলোচিত দিনাজপুরের বিরলে ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যার ঘটনার ৪ দিন পর ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩ থেকে ৪ জনের বিরুদ্ধে বিরল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ছেলে স্বপন চন্দ্র রায় বাদী হয়ে ওই মামলা দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছে বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুস ছবুর। বিরল থানায় দায়েরকৃত এ হত্যা মামলা নং-২০/১১৯, তাং ২১/৪/২০২৫ইং। মামলায় বিরল উপজেলার শহরগ্রাম ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে আতিকুর ইসলাম (৪০), শহরগ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে রতন ইসলাম (৩০), নরসিংপাড়ার আব্দুল মাজেদের ছেলে মুন্না ইসলাম (২৭) এবং পাঁচশালা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে রুবেল (২৮) নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে স্বপন চন্দ্র রায় উল্লেখ করেছেন, আমার বাবা ভবেশ চন্দ্র রায় (৫৫) কে দাদন ব্যবসায়ী আতিকুর ইসলাম ও রতন ইসলাম ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। ওই দু’জন দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় দাদন ব্যবসা করে আসছিল। আমার বাবা নিহত ভবেশ চন্দ্র রায় বিগত প্রায় এক বছর পুর্বে আসামী আতিকুর ইসলামের কাছ থেকে প্রতিমাসে ৩ হাজার ২৫৫ টাকা লাভ (সুদ) দেয়ার শর্তে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেয়। কথা অনুযায়ী প্রতি মাসে লাভের টাকা পরিশোধ করে আসছিল। কিন্তু সংসারের খরচ ও অভাবের তাড়নায় সব টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। এ অবস্থায় উপরোক্ত সকল আসামী গত ১৭ এপ্রিল বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪ টায় দুইটি মোটরসাইকেলযোগে আমাদের বাড়ীতে আসে। বাবার সাথে প্রয়োজনীয় কথা আছে বলে সু-কৌশলে ডেকে নিয়ে যায়। আসামীরা আমার বাবা নিহত ভবেশ চন্দ্র রায়কে ডেকে নেয়ার পরই আমার বাবার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়টি আমি জানতে পেরে বাবার ০১৭৩৪৯৯৭০৯৩ নাম্বারে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাইনি। আসামীরা আমার বাবাকে ডেকে সুদের টাকার জন্য বিভিন্ন মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। আমার বাবা আসামীগনের মানসিক চাপের ফলে অসু¯’ হয়ে পড়েন। অসুস্থ্য হওয়ার পর রাত আনুমানিক পৌনে ৮ টায় আমার বাবার ০১৭৩৪৯৯৭০৯৩ এই নাম্বার থেকে আমার ০১৫২১৭৭২৭৮০ এই নাম্বারে ফোন আসে। তখন আমি ফোনটি বিছিন্ন করে পুনরায় আমার বাবার নাম্বারে ফোন করিলে আসামী রতন ইসলাম ফোন রিসিভ করে বলে আমি রতন বলতেছি তোমার বাবা ভবেশ চন্দ্র রায় নাড়াবাড়ী বাজারে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তুমি তাকে নিয়ে যাও। তখন আমি রতন কে বলি আমি দিনাজপুর শহরে আছি আমার ঘটনাস্থলে যেতে সময় লাগবে তাই আমার বাবাকে যে কোনোভাবে আমাদের বাড়ীতে পৌঁছে দেন। সে সময় ০১৭৮৬৯৮৫১৯৩ এই নাম্বার থেকে পুনরায় আমার ০১৫২১৭৭২৭৮০ এই নাম্বারে ফোন আসে এবং একই কথা বলে। তখন আমি পুনরাবৃত্তি করি। পরে সকল আসামীগনেরা একটি ভ্যান যোগে আমার পিতাকে ফুলবাড়ী বাজারে এনে রাস্তার পার্শ্বে ফাঁকা জায়গায় রাখে। সে সময় আশে পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে উপরোক্ত সকল আসামীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে দিনাজপুর শহর থেকে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসার পর ফুলবাড়ী বাজার হতে আমার বাবাকে এ্যাম্বুলেন্সযোগে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেই। হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার আমার বাবা আগেই মারা গেছেন মর্মে ঘোষণা দেন। হাসপাতালে নিহত বাবার সুরতহাল রির্পোট তৈরী শেষে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজে ময়না তদন্ত শেষে ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমার বাবার মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ।