অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষায় কফি সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নেত্রকোনা জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার গারো পাহাড়ের পাহাড়ি জমি এখন ধীরে ধীরে কফিচাষের মাধ্যমে সবুজে রূপান্তরিত হচ্ছে। একসময় অনাবাদী ও নির্জন জমি যেখানে গাছের ছায়া কম ছিল, সেখানে আজ কফি গাছের ছায়া ও সবুজ ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় শতাধিক কৃষক ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি কফিগাছ রোপণ করেছেন। কৃষকরা বলছেন, এই নতুন চাষ তাদের জীবনে আনে নতুন সম্ভাবনা ও আয়।
কফিচাষের সূচনা ও উদ্যোক্তা
কফিচাষের মূল উদ্যোক্তা নালিতাবাড়ীর কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন। তিনি আগে বান্দরবানে দায়িত্ব পালনকালে কফিচাষের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নালিতাবাড়ী, হালুয়াঘাট ও ঝিনাইগাতীর পাহাড়ি এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে কফিচাষ শুরু করেন।
তার প্রচেষ্টায় এখন এই চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল কফিচাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ পেলে কফি হতে পারে দেশের অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা।”
কফির জাত, ফলন ও সময়সূচি
বিশ্বে বিভিন্ন জাতের কফি থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে ‘এরাবিকা’ ও ‘রোবাস্টা’ সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে রোবাস্টা জাত সফলভাবে চাষের জন্য উপযোগী।
মার্চ-এপ্রিল: কফিগাছে ফুল আসে
মে-জুন: গুটি বাঁধে আগস্ট-সেপ্টেম্বর: ফল পরিপক্ব হয়
ফল শুকিয়ে মেশিনের মাধ্যমে গুঁড়া তৈরি করা হয়। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ৫-৭ কেজি ফলন পাওয়া যায়। প্রতি একরে ২৫০-৩০০টি গাছ লাগানো সম্ভব। এক একর জমিতে বছরে প্রায় এক হাজার কেজি কফি উৎপাদন সম্ভব, যার বাজারমূল্য প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
পরিবেশ রক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রভাব
কৃষকরা জানাচ্ছেন, কফিচাষ শুধু আয় বৃদ্ধি করছে না, বরং পাহাড়ের মাটি ও পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও সহায়ক। কফি গাছ মাটিকে ধরে রাখে, পানি ক্ষয় রোধ করে এবং পাহাড়ের সবুজ রক্ষা করছে।
কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, “আগে এই পাহাড়ি জমি প্রায় অনাবাদী ছিল। এখন কফিচাষ করে আমরা আয় বাড়াচ্ছি এবং পাহাড়ও সবুজ হয়ে উঠছে।”
কর্মসংস্থান ও নতুন সম্ভাবনা
উপজেলা কৃষি অফিস এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। একদিকে চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে কফি রপ্তানির সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে।
নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতীর ও হালুয়াঘাট উপজেলার গারো পাহাড় এখন কফিচাষের মডেল এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানকার কৃষকরা আশা করছেন, এই উদ্যোগ শুধু তাদের নয়, পুরো পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনীতিতেও নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।