গাজীপুর মহানগরের জয়দেবপুর রেলক্রসিং এখন নাগরিক দুর্ভোগের প্রতীক। প্রতিদিন অফিস, স্কুল ও বাজারগামী মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে হারাচ্ছে মূল্যবান শ্রমঘণ্টা। এই ক্রসিং যেন শহরের শ্বাসরোধী গলায় বাঁধা দড়ি—রেলগেট বন্ধ হলেই থমকে যায় গোটা গাজীপুর।

জ্যামে আটকে মৃত্যুবরণ করছে এম্বুলেন্সের রোগী, দুর্ঘটনা বা অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছাতে পারছে না সময়মতো। ফলে ছোট একটি সমস্যাই প্রায়শই বড় বিপর্যেয় রূপ নিচ্ছে। এতে নাগরিক ক্ষোভে বহুবার রাষ্ট্রীয় ও পাবলিক সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—যা এখন এক ভয়াবহ নগর-সংকটে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া রেল কোচিং এলাকার ফুটপাতজুড়ে এখন অবৈধ দোকানপাট, হকার ও মালামাল ওঠানো-নামানোর (ড্রপ) বিশৃঙ্খলা। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা পুরো শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে করে তুলেছে অচল। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও, অল্প সময়ের মধ্যেই তারা আগের জায়গায় ফিরে আসে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মোঃ জাহিদুল হাসান বলেন, জয়দেবপুর রেলক্রসিং এলাকার যানজট ও অবৈধ দখলমুক্ত করতে আমরা পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিচ্ছি। রেলওয়ে, সিটি কর্পোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগ যৌথভাবে সমন্বিত অভিযান শুরু করবে। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। প্রযুক্তিনির্ভর ট্রাফিক মনিটরিং চালু হলে দখলদার ও অবৈধ যান দ্রুত শনাক্ত ও শাস্তির আওতায় আসবে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব আমিন আল পারভেজ বলেন, ফুটপাত ও রেলক্রসিং এলাকা দখলমুক্ত করতে অভিযান চলমান। তবে এটি শুধু প্রশাসনের নয়, নাগরিক সচেতনতার বিষয়ও। সবাই যদি নিজের এলাকার ফুটপাত ও রাস্তা নিজেদের সম্পদ মনে করেন, তাহলে গাজীপুরকে আবার চলাচলযোগ্য ও সুন্দর শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আমরা শীঘ্রই কার্যকরী ব্যবস্থা নিব।

বিএনপি'র কার্যিনর্বাহী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর-২ আসনের এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী ডা. মাজহারুল আলম বলেন,চীনের দুঃখ ছিল হোয়াংহো নদী, আর গাজীপুরবাসীর দুঃখ জয়দেবপুর রেলক্রসিং। এই দুখিনী শহরকে আর থেমে থাকতে দেব না। অবহেলা, দুর্নীতি আর শিক্ষা ও চিকিৎসার অবনতি বন্ধ করতে হবে। গাজীপুরকে আবার গর্বের শহরে পরিণত করবো।

অন্যদিকে, গাজীপুর-২ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মোঃ হোসেন আলী বলেন, বিগত সময়ে গাজীপুরে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি, বরং লুটপাট আর দুর্নীতিতেই জনগণের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। আমরা সরকার গঠন করতে পারলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জয়দেবপুর রেলক্রসিং সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে—উন্নয়ন হবে জনগণের অধিকার ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে।

গাজীপুরবাসীর প্রত্যাশা—একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ, বাসযোগ্য ও চলাচলযোগ্য শহর। যদি রেলক্রসিং এলাকায় আধুনিক ফ্লাইওভার, বিকল্প সড়ক ও কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন হয়, তবে এই দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।