ফেনী থেকে একেএম আবদুর রহীম : কাঠফাটা রোদ, প্রচ- ভেপসা গরমে যখন ফেনীর জনজীবন বিপর্যস্ত ঠিক তখন জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় চলছে দ্বিতীয় দফায় ভয়াবহ বন্যা। বৃষ্টির নামগন্ধ নেই, অথচ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। ভারতের উজান থেকে আসা পানি মুহুরী ও কহুয়া নদী বেয়ে আছড়ে পড়ছে বাংলাদেশের উপর।
ফেনীর পরশুরামে মুহুরী,কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে লোকালয়ে ঢুকেছে। ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের ২২ টি অংশ দিয়ে সোমবার সকাল থেকে পানি তীব্র বেগে আসতে থাকে। সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরায় গত কয়েকদিন অবিরাম বর্ষন হচ্ছে।তার কারনে ভাটির দেশ বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে প্লাবন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকা,পূর্ব অলকা, নোয়াপুর, উত্তর ধনীকুন্ডা, মধ্যম ধনীকুন্ডা বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের উত্তর টেটেশ্বর, মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্ব রাঙ্গামাটিয়া, মধ্যম রাঙ্গামাটিয়াসহ বেশ কিছু গ্রাম হঠাৎ বন্যার কবলে পড়েছে। এসব গ্রামে কোথাও কোথাও বুক সমান পানি উঠেছে।
উপজেলার মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন ও পরশুরাম পৌরসভার প্রায় ৩০ গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। মধ্যম ধনীকুন্ডা, নোয়াপুর, শালধরে তিনটি ও পশ্চিম অলকা গ্রামের মূহুরী নদীর বেড়িবাঁধের পাঁচটি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙন কবলিত এসব বাঁধ দিয়ে গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করছে। লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় নতুন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক-সেতু।
কয়েকদিন আগে অবিরাম বর্ষন ও ভারতের পানির কারনে ফেনীর পাঁচটি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছিল।তখন ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর আংশিক ও দাগনভূঞা উপজেলার আংশিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।তখন মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২২ স্থানে ভেঙে গিয়েছিল। সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।এখন সেসব ভাঙা স্থান দিয়েই প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে সব ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে আতংকের ব্যাপার হচ্ছে পানির স্রোতের তীব্রতা এতবেশী যে স্রোতের সামনে দাঁড়ানোর কোন উপায় নেই।
আউশ ধান,আমনের বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন রবিশস্য, গ্রামীণ জনপথ সব ধ্বংস করে বন্যার পানি ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত করছে।গত বছরের স্মরনকালের ভয়াবহ বন্যার পর মাত্র কয়েকদিন আগের বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠার আগেই ফেনী আবার বন্যার কবলে।গত বছরের বন্যায় ৩০০০ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। কয়েকদিন আগের বন্যায় প্রাথমিক হিসেবে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়।এখন আবার।প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট এই উপর্যুপুরি দুর্যোগে ভারতীয় সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। আজ ফেনীতে আন্দোলন চলছে বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের। একই সাথে দাবী উঠেছে পাউবোকে এর সাথে সম্পৃক্ত না রেখে হয় এটা সেনাবাহিনী দিয়ে অথবা বিদেশী কোম্পানিকে দিয়ে একাজ করানোর। কবে এজেলার মানুষ দুর্ভোগ মুক্ত হবে, কবে নাগাদ তাদের থাকতে হবেনা প্রতি মুহূর্তে আতংকের মধ্যে সেটা কেউ জানেনা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে উল্লেখিত তিন নদীর বাঁধ বারবার ভেঙে যাওয়া এবং বন্যার অন্যতম কারন হচ্ছে বাঁধ তৈরীতে দুর্নীতি ও দায়সারাভাবে নির্মাণ,নদী দখলের কারনে নদী নদীর প্রশস্ততা কমে সরু হয়ে যাওয়া এবং নদী ভরাট হয়ে যাওয়া।
এর একমাত্র প্রতিকার হলো, বাঁধ স্থায়ীভাবে নির্মাণ করার কোন বিকল্প নেই। সেই সাথে দখল মুক্ত করে নদীর প্রশস্ততা ও ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা।তবেই ফেনীর দুঃখ গুছবে। তবে এসব করতে হবে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। ইতোমধ্যে ৭৩০০ কোটি টাকা একনেকে পাশ হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন ১২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। সে টাকা যেন পানিতে না যায় তা সরকারকেই দেখতে হবে।