“আগামী পাঁচ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র হতেই হবে- এটাই আমাদের স্পষ্ট বার্তা। এর কোনও বিকল্প চলবে না।” গাজীপুর মহানগরের ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ী সড়কে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এক পথসভায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান-উদ্বুদ্ধ “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা” কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, “সরকার সম্প্রতি জুলাই সনদের খসড়া প্রকাশ করেছে, কিন্তু খসড়া নয়, আমরা বাস্তবায়ন দেখতে চাই। শুধু সংস্কার বললেই চলবে না, কিভাবে তা কার্যকর হবে সেই প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরেও রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল। তখনও নির্বাচনের রূপরেখা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু কোনো দল তা মানেনি। এবার আমরা আর প্রতারণার সুযোগ দিতে চাই না। এই নির্বাচন হবে জুলাই সনদকে ভিত্তি করে এবং নির্বাচিত সরকার সেই সনদ বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে।”
গোপালগঞ্জ থেকে গাজীপুর, দেশের ৬৪টি জেলায় এনসিপির পদচারণা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা গোপালগঞ্জেও গিয়েছি, কেউ থামাতে পারেনি। আজ গাজীপুরেও এসেছি। দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটিতে আমরা যাবো, মুজিববাদ বিতাড়িত করবো। মুজিববাদীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
পথসভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ন আহ্বায়ক নাহিদ আহসান নিভা, উত্তর অঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অ্যাডভোকেট আলী নাসের খান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, এম এম সোহান, আব্দুল্লাহ আল মুহিন, আসাদুজ্জামান দিপু, শ্রমিক নেতা আরমান হোসাইন, সাগর ইসলাম হৃদয়, রাজিব মাহমুদ প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির উত্তর অঞ্চলের সংগঠক এফ এম শুয়াইব, সিনিয়র যুগ্ন সদস্য সচিব ডাক্তার তাসনিম যারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ন আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন প্রমুখ। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে সমাবেশটি গণজোয়ারে রূপ নেয়।
এনসিপির নেতারা বলেন, “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা” কেবল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি নতুন প্রজন্মের মাঝে ’৭১-এর অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার বিপ্লবী প্রয়াস। তারা বলেন, এই কর্মসূচির লক্ষ্য একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
পদযাত্রা ঘিরে শুরুতে কিছুটা নিরাপত্তা উদ্বেগ থাকলেও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সরব উপস্থিতিতে কর্মসূচিটি শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়। কালিয়াকৈর থেকে মাওনা হয়ে নেতারা জয়দেবপুর রাজবাড়ী পর্যন্ত পথসভায় অংশ নেন এবং বিকাল ৫টার পর চূড়ান্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যের শেষাংশে বলেন, “আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ৫ আগস্টের মধ্যেই জুলাই সনদের বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে, আর তখনই আমরা এই ঐতিহাসিক গণজাগরণ ও নবজন্মের এক বছর পূর্তি উৎসব উদযাপন করবো।”