পাবনা সংবাদদাতা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, জামায়াত দুর্নীতিমুক্ত, সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে তুলতে চায়। এ লক্ষ্যে জামায়াত তার প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে যোগ্য ও দক্ষ লোক তৈরি করে আসছে। তিনি গতকাল শনিবার সকালে সুজানগর ও বেড়া উপজেলা জামায়াত কর্তৃক সুজানগর অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক কর্মী সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
সুজানগর উপজেলা আমির ও পাবনা-২ (সুজানগর ও বেড়ার আংশিক) আসনের জামায়াত মনোনীত সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী অধ্যাপক কে এম হেসাব উদ্দিন এর সভাপতিত্বে বেড়া উপজেলা আমির মাওলানা আতাউর রহমান ও সুজানগর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি টুটুল বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পাবনা জেলা জামায়াতের আমির ও পাবনা-৪ আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল, পাবনা -৫ আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির প্রিন্সিপাল ইকবাল হোসাইন পাবনা-১ আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী ড. ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন, পাবনা-৩ আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী অধ্যাপক আলী আজগর ।
সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন পাবনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল গফফার খান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু সালেহ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, এস এম সোহেল, সাবেক জিপি অ্যাডভোকেট হাতেম আলী, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পাবনা জেলা সভাপতি অধ্যাপক রেজাউল করিম, পাবনা সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুর রব, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পাবনা জেলার সহ-সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন (কাতার), বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন (কাতার প্রবাসী) ইসলামী ছাত্রশিবির পাবনা জেলা শাখার সভাপতি ইসরাইল হোসেন শান্ত, পাবনা শহর শাখার সভাপতি ফিরোজ হোসেন প্রমুখ।
প্রধান অতিথি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ফাঁসি, হত্যা, গুম খুন করে ইসলামী আন্দোলনকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, কারণ ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করে না।
তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে যেসব হত্যা, গুম, খুন সংগঠিত হয়েছে তার সঠিক তদন্ত করতে হবে। এসব ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে সকলকে জানিয়ে দিতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রধান অতিথি বলেন আমাদের সাবেক আমিরে জামাত সহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ফাঁসি যে সব হত্যাকান্ড সংগঠিত করা হয়েছে তা আজ আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত যে সেটা ছিল বিচারিক গণহত্যা।
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বাহাল করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশের কোন নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ হয়নি, বিধায় প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে কখনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না।
জনাব রফিকুল ইসলাম খান বলেন, একটি অর্থবহ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি সরকার সবার সাথে করে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা চালাবে। আগামীতে নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারলেই জুলাই আন্দোলনের রক্তের বদলা নেওয়া হবে। কয়েক হাজার শহীদের রক্তদান অর্থবহ হবে।
তিনি আরো বলেন জুলাই আন্দোলনের আহত চোখ হারানো, পা হারানো পঙ্গুদের পরিবারের সদস্যদের যথাপোযুক্ত চাকুরী প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসন করতে হবে।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সহ গণহত্যায় জড়িত তার মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ও তার দোসর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ও বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন ফ্যাসিস্ট সরকার আমলের বিদেশে পাচারকৃত ২৬ লক্ষ কোটি টাকা ফেরত আনতে হবে। আমাদের জনপ্রিয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দিতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফেরত দিতে হবে। সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দ রেখে দেশের আপামর জনতার জানমালের নিরাপত্তার বিধান নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল বলেন, একটি ইনসাফ পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করবে। এ নির্বাচনে পাবনা থেকে পাঁচটি আসনেই জামায়াত অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচনে বিজয় লাভ করার জন্য আপনাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি আটঘরিয়া উপজেলায় কুরআন পুড়ানো বিএনপি কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা ইসলাম ও কুরআনের শত্রু, আপনাদের বরদাস করা হবে না, আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে আপনাদের প্রতিহত করব।
তিনি বলেন, দুর্নীতি টেন্ডারবাজ সন্ত্রাসীদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়, তাদের হাতে দেশের পরিচালনার ভার দেওয়া যাবে না এজন্য ইসলাম প্রিয় জনগণকে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশ থেকে পালানো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনসমূহকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
প্রিন্সিপাল ইকবাল হোসাইন বলেন, ইসলামী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, এ কর্মীরা আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করে না। এ আন্দোলনের কর্মীরা সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতার বলে বলিয়ান।
তিনি বললেন, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ দেশে একটি সুখী সমৃদ্ধ ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। সমতার ভিত্তিতে দেশের সকল এলাকায় উন্নয়ন সাধিত হবে।
অধ্যাপক কে এম হেসাব উদ্দিন বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের সর্বত্র ইসলামী আন্দোলনের কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে। সকল প্রকার ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আগামী নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীর শাহাদাতের রক্তের বদলা নিতে হবে।
ডক্টর ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন বলেন সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আগামী নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থীদের বিজয় করে এর মাধ্যমে একটি সুখী সমৃদ্ধ স্বচ্ছ ও জবাবদেহিমূলক সরকার গঠন করতে পারলে আগামী দিনে দেশ একটি উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
অধ্যাপক আলী আজগর বলেন, দেশবাসী এখন আর কোন স্বৈরশাসক ও ফ্যাসিস্ট সরকারকে দেখতে চায় না। নব্য কোনো ফ্যাসিট তৈরি হতেও দিতে চায় না। দেশপ্রেমিক সরকার গঠন করার লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠায় যারা বদ্ধপরিকর তাদেরকে নির্বাচিত করতে হবে।
অধ্যাপক আব্দুল গাফফার বলেন, একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনের লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক জনগণের সোচ্চার হতে হবে। আগামী নির্বাচনে প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের বিজয়ী করতে হবে এবং তাদের হাতেই রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রধানের লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এজন্য এখন থেকে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে।