মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, রংপুর অফিস: সুপ্রীম র্কোট থেকে বেকসুর খালাশ পেয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর পর নিজ জন্মভূমিতে ফিরে এসে রংপুরের কৃতি সন্তান বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ উপজেলায় শুকরানা সমাবেশ ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল জীবন্ত শহীদ এটিএম আজাহারুল ইসলাম বলেছেন, যে কথিত অপরাধের অভিযোগে আমাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছিল সে অপরাধের সাথে আমার দূরতম সম্পর্ক ছিল না। আজ দেশের ক্রান্তিকালে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এটিএম আজাহারুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বদরগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় শাহাপুর মাঠে আয়োজিত শুকরানা সমাবেশ ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বদরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা কামরুজ্জামান কবির।
এসব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল জীবন্ত শহীদ এটিএম আজাহারুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিস্ট জালিম শাহী বিগত ১৪ বছর আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসির আদেশ দিয়ে জেলে রেখে কথা বলা বন্ধ করে রেখেছিল। জেলখানায় কেন শহীদ হইনি তা আল্লাহ ভালো জানেন। আমি এখন বয়সে বৃদ্ধ হলেও মনে প্রাণে তরুণ। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নিজেকে উৎসর্গ করে রাখব, ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, বিগত ২০০৯ সাল থেকে জামায়াতে ইসলাম সহ ভিন্নমতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে হত্যা, জেল-জুলুমের শিকার করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার। আল্লাহ এই জুলুমের পরিণতিতে ২৪ শের বিপ্লবে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে তাদের পতন ঘটিয়েছে। রংপুরের গৌরব আবু সাঈদ তার জীবন উৎসর্গ করেছে। এর বিনিময়ে জালিমের পতন ঘটেছে। দেশ-জাতির কল্যাণে সেদিন সে বুক পেতে দিয়েছিল তরুণরা। জালিমরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
এটিএম আজাহারুল ইসলাম মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ৭ বিচারপতির ঐক্যমতের ভিত্তিতে দেয়া রায়ে আমাকে সকল মিথ্যা অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাশ দেয়া হয়েছে। এ জন্য ঐ সকল বিচাপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি সরকারের নিকট দাবি করছি, যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বিচার করেছে, সাক্ষীদের ৩ কিলোমিটার দুর থেকে দেখা সাক্ষ্য গ্রহন করেছে তাদের বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, যারা বিগত ১৬ বছরে জুলুম করেছে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। যারা এই বিপ্লবে জীবন দিয়েছেন, পঙ্গু এবং আহত হয়েছন সেই সব দেশপ্রেমিকদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা মুক্ত হয়েছি। আপনারা সহযোগিতা করলে ইনশাআল্লাহ এই এলাকার আগামীতে সেবা করবো।
এসব সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মাওলানা আব্দুল হালিম এবং জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী অঞ্চল টিম পরিচালক মাওলানা মমতাজ উদ্দিন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর দিনাজপুর অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও রংপুর মহানগরী শাখার আমীর উপাধ্যক্ষ মাওলানা এটিএম আজম খান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও রংপুর জেলা আমীর অধ্যাপক মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও নীলফামারী জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার । বক্তব্য রাখেন রংপুর মহানগর সেক্রেটারী কে এম আনোয়ারুল হক কাজল, রংপুর জেলা সেক্রেটারী মাওলানা মুহাম্মদ এনামুল হক, জেলা সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক রায়হান সিরাজী ও মোস্তাক আহমেদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী অঞ্চল পরিচালক অধ্যাপক আাবুল হাশেম বাদল, জেলা সভাপতি জয়নাল আবেদীন, রংপুর মহানগর সভাপতি এডভোকেট কাওছার আলী, রংপুর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল মোত্তালেব, জেলা জামায়াতের শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা নুরুল আমীন ও মাওলানা মিনহাজুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল হান্নান খান, জামায়াতে ইসলামী বদরগঞ্জ উপজেলা শাখার নায়েবে আমির শাহ্ মুহাম্মদ রুস্তম, সেক্রেটারী মুহাম্মদ মিনহাজুল ইসলাম, রংপুর সদর উপজেলা আমীর মাজহারুল ইসলাম, রংপুর সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম শাওন, সৈয়দপুর উপজেলা আমীর মাওলানা মুস্তাকিম, তারাগঞ্জ উপজেলা সেক্রেটারী মাওলানা ইয়াকুব আলী, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারী অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুছ আজহার, ইসলামী ছাত্রশিবির রংপুর মহানগর সভাপতি নুরুল হুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হক দুলু ও সনাতনি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র রায়, ধনী কুন্ড প্রমুখ।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ২০১৯ সালে আজাহার ভাইয়ের ফাঁসির আদেশের পর যে পুলিশ তার কবর দেয়ার স্থান সন্ধান করেছিল, সেই পুলিশ এখন তাঁকে সালাম দেয়। আল্লাহ আজাহার ভাইয়ের হায়ত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী অঞ্চল টিম পরিচালক মাওলানা মমতাজ উদ্দিন বলেন, যারা একদিন জুলুম করেছে তারা আজ পালিয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর দিনাজপুর অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল বলেন, আল্লাহর রহমতে আজাহার ভাই এখন মুক্ত হয়েছেন তাঁকে দিয়ে জাতির বড় কিছু মেহনত করাবেন।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও রংপুর মহানগরী শাখার আমীর উপাধ্যক্ষ মাওলানা এটিএম আজম খান বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জের মানুষ আজাহার ভাইকে নির্বাচিত করে সকল জুলুমের বিচার করবেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও রংপুর জেলা আমীর অধ্যাপক মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, জাতির ক্রান্তিকালে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা দেশ ছেড়ে পাকিস্তান পালিয়ে যায়নি। জালিমরাই ভারতে পালিয়ে গেছে।
এর আগে বদরগঞ্জ পৌরসভা এলাকার বালুয়াভাটা এলাকায় তাঁর নিজ বাসভবনে দীর্ঘ দেড় দশক পর সকালে ফিরে আসেন এটিএম আজাহারুল ইসলাম ভাই। ইতোমধ্যে দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত থাকা তাঁর বালুয়াভাটা বাসভবনের প্রয়োজনীয় আধুনিকায়ন ও সংস্কার করা হয়েছে।
- এর আগে গতকাল ১২ই জুন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তারাগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শুকরানা সমাবেশ ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল জীবন্ত শহীদ এটিএম আজাহারুল ইসলাম সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
জনসমর্থন থাকলে কাউকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়না, আমরাতো পালাইনি
সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা : জন সমর্থন থাকলে কেউ দেশ ছেড়ে পালায়না, পালাতে হয়না। বরং জনগণই তাদের রক্ষা করে। আমরা তো পালাইনি। যারা বড় বড় বুলি আউড়িয়েছে তারাই পালিয়েছে। মানবতা বিরোধী মামলায় ফাঁসির রায় থেকে সদ্য কারামুক্ত জামায়াত ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাবেক সহকারি সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এসব কথা বলেছেন।
তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় দীর্ঘ ১৪ বছর কারাভোগের পর নিজ জন্মভূমি রংপুরের বদরগঞ্জে যাওয়ার পথে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেছেন। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল পরিচালক মাওলানা আবুল হাসনাত আব্দুল হালিমসদস্য নীলফামারী জেলা জামায়াত ইসলামী আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার, নায়েবে আমির ড. খায়রুল আনাম, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আন্তাজুল ইসলাম, উপজেলা আমির হাফেজ আব্দুল মুনতাকিম, সেক্রেটারি আলহাজ¦ মাজহারুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী মিন্টুকে বলা হয়েছিল, আপনি আমেরিকা থেকে দেশে আসিয়েন না। তিনি বলেছিলেন আমি তো কোন অপরাধ করিনি। মরতে হলে দেশে মরবো, আমি পালাবো কেন? জীবন দিয়েছেন তবু দেশত্যাগ করেননি।
অথচ যারা বড় বড় কথা বলেছিল, আজ তারা পলাতক। এর কারণ কি? মূলত: মানুষের সাথে জুলুম করার জন্যই তারা জনধিকৃত হয়েছে। মিথ্যে দিয়ে কখনই সত্য চেপে রাখা যায়না। সত্য আপন মহিমায় একদিন উদ্ভাসিত হবেই।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘ ১৪ বছর পর কারা মুক্ত, স্বাধীন। স্বাধীন ভাবে মন খুলে কথা বলতে পারছি। যারা আমার জন্য রোজা রেখেছেন, দোয়া করেছেন, কাবার গিলাফ ধরে ধরে আমার জন্য কেঁদেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
তিনি আগামীতে দেশের জন্য, মানুষের জন্য দলের হয়ে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলে ও কাজ করে বাকি জীবন দ্বীনের পথে সঠিক ও সুন্দর ভাবে চলার ক্ষেত্রে আল্লাহর করুনা পাওয়ার জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রত্যাশা করেন। যাতে ইসলামী হুকুমাত কায়েমের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়।
এর আগে তিনি সকাল ৮ টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। পরে সড়ক পথে তিনি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা উদ্দেশ্যে রওয়ানা হোন। বিমানবন্দরে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পথে তারাগঞ্জে তাঁকে গণসংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।