কবির আহমদ, সিলেট : মুসলমানদের অন্যতম ২য় বৃহত্তম উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা আগামী শনিবার। আর দুই দিন বাকি থাকলেও কুরবানির পশুর হাট এখনও জমে ওঠেনি। নগরীর বৃহত্তম পশুর হাট কাজিরবাজারসহ অন্যান্য হাটে ক্রেতারা বাজারে আসলেও দাম-দর করছেন তবে তেমন বেচা-কেনা হচ্ছে না। গতকাল বুধবার সরজমিনে কাজিরবাজার পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। তবে বিক্রেতারা আশা করছেন আজ বৃহস্পতিবার ছুটির দিন থেকে ভালো বেচা-কেনা হবে। প্রতিবার ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই হাটে বেচাকেনা শুরু হলেও এবার সেই চিত্র নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবার কুরবানির ঈদে সবধরনের মানুষ থাকলেও এবার এক দলের মানুষ নেই। যার কারণে আরো কমেছে ক্রেতা উপস্থিতি। তখন সরকারদলীয় লোকজন থাকায় বাজারে ক্রেতা উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলের লোকজনই ছিল কুরবানির হাটে। গতবছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রয়েছেন দেশের বাহিরে। যার কারণে মুষ্টিসংখ্যক মানুষজন এবার হাট থেকে দূরে রয়েছেন।
নগরের মারকাজ পয়েন্ট, সুবিদ বাজার এলাকায় ২০/২৫ জনকে গরু নিয়ে অবৈধ হাটে বসতে দেখা যায়। সেখানে ক্রেতাদের কিছু উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে ১৫/২০ জন করে শুরু করেই অবৈধ হাট বসে। তবে ছুটির দিন শুরু হওয়ার সাথে সাথে গরু ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যায়।
কাজির বাজারে সিলেটের কানাইঘাটের গাছবাড়ি থেকে আসা গরু বিক্রেতা আব্দুস সালাম জানান, এক সপ্তাহ আগে ১৫টি গরু নিয়ে আসছি। মাত্র ৩টি বিক্রি করেছি। মানুষজন নেই, বিক্রিও নেই। প্রতিবছর এত দিনে সবগুলোই বিক্রি করে ফেলতাম। এবার আর তা হচ্ছে না। মানুষজন যারাই আসে, শুধু দাম জিজ্ঞেস করেই চলে যায়। সামনে আরো ২/৩ দিন আছে, দেখা যাক কি হয়। নগরীর শেখঘাট থেকে গরু কিনতে আসা আব্দুল মালিক জানান, এবার গরু কম। আগে এরকম ৩/৪ দিন আগে আসলে হাটাই যেত না। আর আজ তেমন মানুষ নেই। দেখতেছি গরু। মনমতো কোনবানীর পশু পাচ্ছি না। গরু পছন্দ হলেও দামে হচ্ছে না। লাখ টাকার নিচে যেন গরুই নেই।
সারা বছর গরুর ব্যবসা করা নগরের তেমুখী এলাকার গরু ব্যবসায়ী মাখন মিয়া জানান, গত মঙ্গলবার রাতে ১২টি গরু নিয়ে আসছি। গতকাল বুধবার সকালে ১টি গরু বিক্রি হয়েছে। আমার এখানে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮০ হাজার টাকার গরু রয়েছে। ভালো দাম পেলে বাকিগুলোও বিক্রি করতে পারবো। মানুষজন কম আসছেন, যার কারণে বিকি হচ্ছে না। তবে আশা করা যায়, কাল থেকে মানুষজনের আনাগোনা বাড়বে।
কাজির বাজার গরুর হাটের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লুলন জানান, বাজারের অবস্থা ভালো আছে। আজ থেকে আশা করা যায় মানুষজনের উপস্থিতি আরো বাড়বে। আর এখন ক্রেতারা আসছেন, গরু দেখছেন, দামদর করতেছেন। তবে শহরের লোকজন ঈদের আগেরদিনই গরু কিনে। কারণ এটি রাখার জন্য আলাদা জায়গারও প্রয়োজন রয়েছে। আগে বিভিন্ন জায়গায় গরুর গাড়ি আটকানো হলেও এবার প্রশাসনিকভাবে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কারণে কেউ আটকানোর কোনো অভিযোগ পাচ্ছি না। সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এবছর সিলেটে ৬৯টি অস্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৬২টি ও নগরে ৭টি হাট রয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, এসএমপির আওতাধীন এলাকায় প্রায় ১৭টি জায়গায় কুরবানির হাট রয়েছে। এখনো ভালোভাবে হাট বসে নি। যার কারণে কোনো অভিযোগ পাচ্ছি না আমরা। সব জায়গায়ই পুলিশি নিরাপত্তা রয়েছে। কোথাও গাড়ি আটকানোর বা গরু ছিনিয়ে নেওয়া কোনো অভিযোগ কেউ এখনো পর্যন্ত করেনি।