মোংলায় লাইসেন্সবিহীন ও রেজিস্ট্রেশনহীন পর্যটকবাহী নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের উদ্যোগে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে অংশ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নৌযান মালিক ও চালকদের সতর্কবার্তা প্রদান করেন এবং আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফিকেট ও লাইসেন্স গ্রহণের নির্দেশনা দেন।
অভিযান শেষে কর্মকর্তারা জানান, অনেকে এখনও নৌযান পরিচালনায় আইন সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন নন। তাই তাদের সচেতন করার পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে বৈধ প্রক্রিয়ার আওতায় আসার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে এসব নৌযান নিরাপদে এবং আইনের অধীনে পরিচালিত হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আমরা আজকের অভিযানে মূলত সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছি। যারা এখনো রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস বা লাইসেন্স গ্রহণ করেননি, তাদের দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী অভিযানে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে মোংলা থেকে সুন্দরবনে তিন দিনের ট্রিপ পরিচালনাকারী জাহাজগুলো নিয়মিতভাবে ডিজিশিপ থেকে নিবন্ধন গ্রহণ করে থাকে। তবে ছোট আকারের কাঠের বা ফাইবারের তৈরি স্থানীয় জালি বোটগুলো—যেগুলো মূলত নদীপাড় বা গরমজল এলাকায় স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত করে—সেগুলোর বেশিরভাগ এখনো নিবন্ধনের আওতায় আসেনি।
বিগত কয়েক বছর ধরে এসব ছোট নৌযানকে বৈধ নিবন্ধনের আওতায় আনতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালানো হলেও প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানাও করা হয়েছে। তবে ক্ষুদ্র নৌযান মালিকদের জীবিকার বিষয় বিবেচনা করে এখনো পর্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মানবিক দিক বিবেচনা করলেও প্রশাসন এবার আর অবহেলা বরদাস্ত করবে না। মোংলায় আজকের অভিযানে অংশ নেয় মোংলা উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদপ্তর (ডিজিশিপিং), বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও মোংলা থানা পুলিশ।
যৌথ বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, আমরা সবাই মিলে এখানে এসেছি মানুষকে সচেতন করতে। সবাই যেন আইন অনুযায়ী চলে এবং নৌযানগুলোতে পর্যাপ্ত সেফটি ইকুইপমেন্ট থাকে—এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা যেন তাদের নৌযানের রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সম্পন্ন করেন, এজন্যই আজকের অভিযান ও সতর্কতা।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে একটি জালি বোটে করে সুন্দরবন ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে এক প্রবাসী বাংলাদেশি নারী পাইলট বোট উল্টে পশুর নদীতে নিখোঁজ হন। কয়েকদিন পর উদ্ধার হয় তার নিথর দেহ। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে এবং নৌযান নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন করে তৎপরতা শুরু করে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুন্দরবনগামী পর্যটকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাদের এই অভিযান ও তদারকি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।