চলতি অক্টোবর মাসে সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশনকে ‘কাস্টমস কমিশনারেট’ হিসেবে স্বীকৃতির সম্ভাবনা রয়েছে। জনপ্রশাস মন্ত্রণালয়ের গেজেট হলেই কাস্টমস কমিশনারেট হিসাবে ঘোষণা হবে ভোমরা শুল্ক ষ্টেশন। আর এই স্বীকৃতি বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে নতুন গতি আসবে এবং ভোমরা বন্দরের আর্থিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। সব ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ পাবে ভোমরা বন্দর। বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।

ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল ১৬টি পণ্য নিয়ে এলসি স্টেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করে ভোমরা স্থলবন্দর। ২০১৩ সালে ওয়্যার হাউস নির্মাণের পর ভোমরাকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর করা হয়। কিন্তু মাত্র ১৫ একর জমির উপর নির্মিত অপ্রতুল অবকাঠোমো দিয়ে চলছিল বন্দরের কার্যক্রম।

এমতাবস্থায় ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিন দাবির মুখে ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভোমরা বন্দর দিয়ে গুড়ো দুধ ব্যতিত সকল পণ্য আমদানির অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দেয়া সুযোগ ঠিকমত কাজে লাগতে পারছিলা না বন্দর ব্যবহারকারি ব্যবসায়িরা।

সার্বিক দিক বিবেচনায় ভোমরা স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১১শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। “ভোমরা স্থলবন্দর সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন শীর্ষক” এই প্রকল্পের আওতায় বন্দর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সেখানে উন্নতমানের ওয়ার হাউজ, শেড, গাড়ি পার্কিং ইয়ার্ড, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড, পর্কিং ইয়ার্ড, আর্ন্তজাতিকমানের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ও বন্দর অভ্যন্তরে উন্নত ও টেকসই সড়ক নির্মাণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের কাজও চলমান রয়েছে।

ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদক আব্দুল গফুর সরদার বলেন, ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারতে ঘোজাডাঙ্গা কাস্টমস থেকে কলকতার দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটারেরও কম থাকায় আমদানি-রপ্তানিকারকরা এই বন্দরের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখান। দূরত্ব কম, পণ্য পরিবহনে ফুয়েল সাশ্রয় ও সময় বাঁচার কারণে ব্যবসায়ীরা অতি কম সময়ের মধ্যে ভোমরা বন্দর থেকে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য সরবরাহ করতে পারেন। এজন্য ব্যবসায়িরা ক্রমশঃ ভোমরা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ভোমরা শুল্ক স্টেশনকে ‘কাস্টমস কমিশনারেট’ হিসেবে স্বীকৃতি পেলে এই বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্য আরো সম্প্রসারিত হবে বলে জানান তিনি।

ভোমরা কাস্টমস সি অ্যান্ড এফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা জানান, পূর্ব ঘোষিত সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ১৭ আগস্ট কমিশনারেট স্বীকৃতির উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাবের কারণে কার্যক্রম বিলম্বিত হয়। তবে সব বাধা অতিক্রম করে অক্টোবরেই স্বীকৃতি আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভোমরা কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, কাস্টমস ষ্টেশনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে কাস্টমস কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। নব নির্মিত কমপ্লেক্সটি উদ্বোধন করা হয় ২০২৪ সালের ২১ জুন। যেখানে রয়েছে সাততলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, তিনতলা যাত্রী সেবা ও ব্যাগেজ স্ক্যানিং ভবন, চারতলা অফিসার্স কোয়ার্টার, পাঁচতলা ডরমিটরি এবং দুইতলা কাস্টমস কমিশনারের বাস ভবন। কাগজপত্র সবকিছু রেডি হওয়ার পাশপাশি বেতনভাতাও এসেছে। ভোমরা শুল্ক স্টেশনকে ‘কাস্টমস কমিশনারেট’ হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় পাশ হয়েছে। শুধুমাত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটা গেজেট বাকি রয়েছে। তবে খুব শিঘ্রেই এটি হয়ে যাবে বলে আশ করা যায়।

তিনি আরো বলেন, কমিশনারেট স্বীকৃতি আসলে ভোমরা বন্দরের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে। এর ফলে রাজস্ব অর্থনীতিতে অবদান বাড়বে এবং দেশের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে শুধু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে কমিশনারেট স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষা রয়েছে। এটি হলে সাতক্ষীরাবাসী অনেক ভাল থাকবে।