ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদীর মৃত্যুর খবরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজশাহী মহানগর আ’লীগের অফিস।বৃহস্পতিবার এস্কেভেটর দিয়ে রাতভর ব্যস্ত থেকে ভবনটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে হাদীকে হত্যার প্রতিবাদ এবং হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মহানগরী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ওসমান হাদীর মৃত্যুর খবর শোনার পরই বৃহস্পতিবার রাতে রাবি’র বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ক্যাম্পাসে। পরে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে রাজশাহী শহরে আসেন। এতে নেতৃত্ব দেন রাকসু নেতৃবৃন্দ। শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও নেমে আসেন রাস্তায়। মধ্যরাতে সাহেববাজার এলাকা মিছিলে মুখর হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা রাত সাড়ে ১২টার দিকে এস্কেভেটর দিয়ে নগরীর কুমারপাড়া এলাকায় মহানগর আ’লীগের অফিস ভাঙা শুরু করে। এক পর্যায়ে ভোর ৪টার দিকে আ’লীগ অফিস গুঁড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। এর আগে গত বছরের ৫ আগস্ট আ’লীগ সরকারের পতনের পর মহানগর আ’লীগের এই অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছিল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তবে এটি ভগ্নপ্রায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুর থেকে হাদীর মৃত্যুর খবর পৌঁছানোর পর জুলাই-৩৬ মঞ্চ, এনএসিপি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে হাদীর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে রাজশাহী মহানগর আ’লীগের কার্যালয়ের সামনে যান। এছাড়া রাবি’র বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে আসা শিক্ষার্থীরাও এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে রাস্তার ওপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এনিয়ে রাকসু’র জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া একটি স্ট্যাটাসে বলেন, আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়টি গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। রাজশাহী মহানগর এনসিপির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়েছি। সিটি করপোরেশনকে বলা হয়েছে সেখান থেকে ধ্বসংস্তুপ সরিয়ে নিতে।”
এদিকে গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে নগরীর জিরোপয়েন্টে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজশাহী মহানগরীর উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় জিরোপয়েন্টে সমাবেশে মিলিত হয়। অপরদিকে, একই দিন জুম্মার নামাজ শেষে রাবি ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাকসু প্রতিনিধিসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে রাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিল শুরু হয়ে বিভিন্ন হল প্রদক্ষিণ করে লাইব্রেরির সামনে এসে সমাবেশে রূপ নেয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই শরিফ ওসমান হাদীকে হত্যা করা হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে আ’লীগ-সমর্থিত সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। বক্তারা দাবি করেন, হত্যাকারীদের ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পরে ওসমান হাদীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করা হয়।