বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নতুন স্বাধীনতার পর এবারের ঈদ নতুন একটি আবহে উদযাপিত হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগ মানুষের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আওয়ামী জুলুমের অবসানে যারা রক্ত দিয়েছে আমরা শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এবং আহত পঙ্গুত্ববরণকারীদের সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি।’ তিনি বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন কায়েম করে খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি এসব বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়াও আগামী নির্বাচনে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের জন্য ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কোন ষড়যন্ত্র জামায়াতের অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না। জামায়াত তার অভিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’ তিনি বলেন, আমরা একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে হিন্দু মুসলিম কিংবা মেজরিটি মাইনরিট বলে কিছু থাকবে না। দুঃশাসন এবং জুলুমের কারণে আপনাদের মুখ দেখতে পারিনি। আজ প্রাণখুলে দেখতে চাই। তিনি বলেন, ‘মাহে রমযানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে বাকি ১১ মাস আমাদেরকে সুন্দরভাবে চলতে হবে। তাকওয়াপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে জামায়াত কর্মীদেরকে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে। মায়া-মমতা ও ভালোবাসা ভরা সমাজ কায়েমে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার জন্য তিনি সংগঠনের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।’ বুধবার (২ এপ্রিল) খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে বানিয়াখালী হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত ঈদ পুনর্মিলনীতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
এডভোকেট আবুল খায়েরের সভাপতিত্বে ও হারুনুর রশিদের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মুখতার হুসাইন, নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, ড. একরাম উদ্দিন সুমন, সরদার আব্দুল ওয়াদুদ, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল হাকিম, এস এম মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
অপরদিকে ঈদ উল ফিতরের পরের দিন (১ এপ্রিল) মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকাস্থ ডুমুরিয়া-ফুলতলা কল্যাণ পরিষদের উদোগ্যে সরকারি শাহ্পুর মধুগ্রাম কলেজ অডিটরিয়ামে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। ঈদ পুনর্মিলনী পরিষদের সভাপতি সরদার আবদুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে ও জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যার পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও অধ্যক্ষ গাওসুল আযম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, হাফেজ আমিনুল ইসলাম, আশরাফুল আলম, জেলা ছাত্রশবির সভাপতি ইউসুফ ফকির, পরিষদের সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম আল ফয়সাল, ড. একরাম উদ্দিন সুমন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মওলানা মুখতার হুসাইন ফুলতলা উপজেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলিম মোল্যা, ডুমুরিয়া উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, শেখ মিজানুর রহমান, মাওলানা কামারুজ্জামান, ড. মাওলানা আমিনুল ইসলাম, ডা. আবু এসানুর, শরিফুল ইসলাম পারভেজ, এডভোকেট মাহফুজুর রহমান প্রমুখ। এদিন সকাল সাড়ে ১০ টায় শাহপুর ভ্যাটার্নিটি কলেজে ও সকাল সাড়ে ১১টায় ডুমুরিয়া উপজেলা অডিটোরিয়ামে প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ের জনশক্তিদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন-জাতীয় স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে ও নতুন সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বার্থে এক মহান জাতীয় ঐক্য। যেখানে দল বড় হতে পারে না, ব্যক্তি বড় হতে পারে না। সবার ঊর্ধ্বে থাকবে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাংলাদেশের রাজনীতি, বাংলার সংস্কৃতি এবং নতুন করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এক আপসহীন ঐক্য। তিনি বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে আমরা মাথা নত করতে চাই না। সেজন্য সকল দলের এক জায়গায় এসে মহা ঐক্য গঠনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ঐক্যই শক্তি, ঐক্যই মুক্তি ও ঐক্যই আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আল্লাহ জালিমের কবল থেকে মুক্ত করেছেন। ফিলিস্তিনকেও যেন আল্লাহ তায়ালা জালিমের হামলা থেকে মুক্ত করে দেন।
৩১ মার্চ (সোমবার) সকাল ৮টায় খুলনার শিরোমণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ঈদ উল ফিতরের নামায আদায় করেন। পরে তিনি এলাকাবাসীর সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সকাল ১০ টার দিকে তিনি খুলনার সরকারি বিএল কলেজের সাবেক জি এস শহীদ মুন্সী আব্দুল হালিমের বাসভবনে যান। এ সময় তিনি শহীদের পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও শহীদ আব্দুল হালিমের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, মহানগরী সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, সেক্রেটারি রাকিব হাসান, খুলনা জেলা উত্তর সভাপতি ইউসুফ ফকির, জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, শহীদের ছোট ভাই মুন্সী আব্দুল হাফিজ কচি, খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর আমীর হাসান মাহমুদ টিটো, সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুন, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের অফিস সম্পাদক ইসরাফিল হোসেন, বিএম সম্পাদক আসিফ বিল্লাহ, ছাত্র অধিকার সম্পাদক ইমরানুল হক, গোলাম মুইজ্জু, খাইরুল বাশার, বিএল কলেজ সভাপতি হযরত আলী, সেক্রেটারি হোসাইন শেখ প্রমুখ। অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার উপস্থিত সকলকে শহীদ মুন্সী আব্দুল হালিমের আত্মত্যাগ ও কুরবানিকে ইসলামী আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।