শফিকুল ইসলাম, গোমস্তাপুর, (চাঁপাইনবাবগঞ্জ): মাছে-ভাতে বাঙালি, প্রবাদ বাক্যটি যেন দিন দিন বদলে যাচ্ছে। খাদ্য তালিকায় মাছ একটি নিত্য খাবার যা আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে মাছে আগের দিনের সেই স্বাদ আর নেই। মাছ চাষে ফিড খাওয়ানোর কারণে থাকছে না প্রকৃত স্বাদ ও গন্ধ। পোনা উৎপাদন থেকে শুরু থেকে চলছে কৃত্রিম খাবার, ভাসমান ডুবো লেয়ার। কথায় আছে, “মাছের পোনা, দেশের সোনা। আর দেশী মাছ, পুষ্টির আঁধার”।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় নদী-নালা, খাল, বিল, হাওড়-বাওড় শুকিয়ে মুক্ত জলাশয়ের মাছ বিলুপ্ত হয় এবং ফসলি জমিতে অতি মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োগের কারণে মাছের জীবনচক্র আজ বিপদগ্রস্ত। কৃত্রিম উপায়ে ঘের-পুকুরে মাছের চাষ বৃদ্ধি পেলেও প্রকৃত স্বাদ বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গ্রাম-গঞ্জের খালে বিলে কিছু দেশী মাছ মিললেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

সরোজমিনে মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন প্রজাতির চাষের মাছ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিদেশী রুই, কাতলা, চিতল, কৈ, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস এবং কার্প প্রজাতির মাছের যোগানই বেশি। দেশী মাছ খোঁজ করলে কয়েকজন জন মৎস্যজীবী অল্পসংখ্যক মাছ ডালিতে নিয়ে বসে আছে। আর যে দাম চাচ্ছেন তা নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

ভুক্তভোগীরা জানান, মাছের উৎপাদন বাড়াতে হলে উম্মুক্ত জলাশয়, মাছ সংরক্ষণ মৎস্য পরিবেশবান্ধব নীতি ও অবকাঠামো গড়ে তোলা দরকার। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করলে মাছের যে প্রাকৃতিক জলাশয়, মুক্ত জলাশয় রয়েছে তা আমাদের অযাচিত ও অনৈতিক ব্যবহারের কারণে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ও বংশবিস্তারকে হুমকির সম্মুখীন করছে। এ ব্যাপারে মৎস্য কর্মকর্তাদের বক্তব্য, দেশী মাছগুলোকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের আওতায় আনতে হবে। বদ্ধ জলাশয়ে দেশী প্রজাতির মাছ যাতে বেশি পাওয়া যায়, সেজন্য বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। সেগুলো হলো, ধান ক্ষেতে ছোট প্রজাতির মাছ চাষের ব্যবস্থা করা এবং এ ধরনের মাছ সারা বছর পাওয়ার জন্য ধানক্ষেতে মিনি পুকুর তৈরি, মাছের প্রজনন মৌসুমে মাছ না ধরা, মাছ কমানোর জন্য বিষ প্রয়োগ বন্ধ করা,ফাঁস জাল, কারেন্ট জাল ব্যবহার না করা, রাক্ষুসে মাছ চাষ বন্ধ করা, রুই জাতীয় মাছের সাথে পছাট প্রজাতির মাছের মিশ্র চাষ, জলাশয় এবং পুকুরে দেশী মাছের চাষাবাদের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা’।