রেজাউল করিম রাসেল, কুমিল্লা অফিস : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে জনসাধারণের মাঝে ততই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। ভোটারদের মাঝে চলছে নানা সমীকরণ। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ ধরেই ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। তাছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর কুমিল্লা-৬ সংসদীয় আসনে ভোটের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ। ৫ আগস্টের পর থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। কুমিল্লা সদর সংসদীয় আসনে সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী মরহুম কর্নেল আকবর হোসেনের মৃত্যুর পর কুমিল্লা সদর আসনে বিএনপি আর বিজয়ী হতে পারেনি। এ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাজী আমিনুর উর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল হক চৌধুরীর দ্বন্দ্ব চলছে প্রকাশ্যে। তাদের এই দ্বন্দ্ব নিরসন করে কোনভাবেই সকল পক্ষকে এক সাথে করে মনোনয়ন দেয়া বিএনপির পক্ষে সম্ভব হবে না মনে করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারর্পাসনের উপদেষ্টা হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিনকে, চ্যালঞ্জে ছুড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে নামেছে সাবেক সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। সম্প্রতি নিজ কর্মী-সর্মথকদের সঙ্গে এক মতবনিমিয় সভায় আগামী সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এই নেতা। সাক্কু আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েই থেমে থাকেননি। মাঠে ইয়াছিনকে রীতিমতো চ্যালঞ্জে ছুঁড়ে দিয়েছেন। এতে সাক্কুকে নিয়ে চলছে মিশ্র প্রতক্রিয়া। সচেতন মহলের প্রশ্ন তবে কি জটিল সমীকরণ কিংবা সংঘাতের দিকেই যাচ্ছে বিএনপির রাজনীতি।
অন্যদিকে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। মহানগরী জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। সিটি এলাকা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এমনকি গ্রাম পর্যায়ে নেতাকর্মীরা গণসংযোগ উঠান বৈঠক, শুরু করেছে। এরই মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা সম্পন্ন করেছে তারা। এ আসন থেকে অতীতে জামায়াত প্রার্থী হয়ে সংসদে যাননি। জামায়াত মনোনীত প্রার্থীকে সংসদে পাঠাতে ব্যাপকহারে জনসংযোগ করছেন জামায়াত কর্মীরা। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন তারা। তবে পূর্ব থেকেই এ অঞ্চলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আধিপত্য বেশি হওয়ায় আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কৌশলে জামায়াতের বিজয়ই অনেকটা নিশ্চিত বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাক্কু প্রার্থী হলে ইয়াছিনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তাছাড়া সংঘাত-সহিংসতা বাড়তে পারে। তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি স্রোতের বিপরীতে তেমন সুবিধা করতে পারবেন না সাক্কু। দলীয় মনোনয়ন যিনি পাবেন কুমিল্লায় তিনিই এগিয়ে থাকবেন। এদিকে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দাবি সাক্কু ভোটে জেতার জন্য নয়, বিএনপি প্রার্থীকে হারাতেই মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। সম্প্রতি নিজ নেতাকর্মীর সাথে এক মতবিনিমিয় সভায় মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ইয়াছিন সাহেব আপনি নিজেকে সামলান। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবো। আপনার শক্তি থাকলে আমাকে আটকান। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন আমি দশ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে র্যালি করব। আমি আর মেয়র নির্বাচন করব না। আমাকে বাধা দেবে কে? আমি যেটা বলি সেটাই করি। ইয়াছিন সাহেব আপনাকে সামনাসামনি চ্যালেঞ্জ করলাম। আগামী তিন মাস আমি মাঠে র্কাযক্রম পরিচালনা করব। তোমাদের তো পদ-পদবী আছে। আমার তো কোন পদ-পদবী নাই। আমাকে বাধা দেবে কে? আমি এখন থেকেই প্রতিটি ঘরে ঘরে কার্যক্রম পরচিালনা করব। সাক্কুর এমন ঘোষণায় কুমিল্লায় বিএনপিতে ফের অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুম বলেন, মনিরুল হক সাক্কু বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগরে সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতা ভোগ করেছেন। ফ্যাসস্টি শেখ হাসিনার পায়ে ধরে নীতি-আর্দশ বির্সজন দিয়েছেন। এখন বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছনে। ভোটে জয়ী হওয়ার জন্য নয়, সাক্কু প্রার্থী হতে চান বিএনপিকে ক্ষতি করার জন্য। ইয়াছিন সাহেবকে ক্ষতি করাই ওনার মূল উদ্দেশ্য।
এ বিষয়ে সাবেক সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবো, না পেলে আমি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করব। আমি আর মেয়র নির্বাচন করব না। ইয়াছিন সাহেবের সাথেই আমি এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো।
এদিকে আসন জটিলতার কারণে কুমিল্লার তিনটি আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মনিরুল হক চৌধুরী। এর মধ্যে কুমিল্লা-৬ সদর আসন এবং কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, লালমাই, সদর দক্ষিণের একাংশ) সংসদীয় নির্বাচন করতে পারেন বলে জানিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারর্পাসনের উপদেষ্টা হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন বলেন, আমি প্রতিহিংসার রাজনীতেত বিশ্বাস করি না। সাক্কু সাহেব যেভাবে কথা বলে আমি সেভাবে উত্তর দিতে চাই না। বিএনপির আর্দশ ধারণ করে রাজনীতি করি। আগামী নির্বাচনে দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব।
জামায়াত মনোনিত প্রার্থী কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার জন্ম নিয়েছে। দেশের জনগণ ৫৪ বছর অন্য সব রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখেছে। কিন্তু এবার জামায়াতকে ঘিরেই নতুন স্বপ্ন দেখতে চায়।
আদর্শ সদর উপজেলা জামায়াত মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক এ কে এমদাদুল হক মামুন, এদেশের মানুষ পরির্বতন চায়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। জামায়াতের সঙ্গে দেশের সব শ্রেণির মানুষের পূর্ণ সমর্থন আছে। আগামী নির্বাচনে সব ইসলামি দল নিয়ে এক বৃহৎ জোটের হলে। কুমিল্লা সদর-৬ আসনে ইনশাহআল্লাহ আমরা বিজয়ী হবো ।
এ বিষয় কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এর সাবেক সহকারী মহাসচিব সহিদ উল্লাহ মিয়াজী বলেন, বিএনপির দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিয়ে ব্যস্ততার ফাঁকে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী কাজী দ্বীন মোহাম্মদ মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন বস্তি, পাড়া-মহল্লায় মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। ক্লিন ইমেজ, সৎ ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী কুমিল্লা সদর আসনের মানুষের কাছে বেশ প্রিয়। প্রায় ২৭ বছর ধরে কুমিল্লা নগরীর আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা অঞ্চলের সহকারী পরিচালকেরও দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ দুইযুগের বেশি সময় ধরে কুমিল্লার দায়িত্বে থাকায় প্রতিটি নারী-পুরুষের কাছে যাওয়া ও দাওয়াত পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন।