বাংলাদেশে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। শুধু দুর্ঘটনাই নয়, নারী ও শিশুরা সড়ক, গণপরিবহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সহিংসতা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গত বছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাড়ে ৮ হাজার মানুষ।

গতকাল সোমবার রাজশাহী জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। ব্র্যাক সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির শিখা প্রকল্পের সহযোগিতায় রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ এই কর্মশালার আয়োজন করে। এতে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনসচেতনতা, আইন প্রয়োগ ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারসহ সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করা হয়। কর্মশালায় উপস্থাপিত তথ্যে জানানো হয়, বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যুর অষ্টম প্রধান কারণ। প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ৭০০ জন এবং প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৫৫ জন মানুষের প্রাণ ঝরে যায় সড়কে। বাংলাদেশেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বিআরটিএ-র হিসাবে প্রাণ হারান অন্তত ৫ হাজার ৩৮০ জন। আর বেসরকারি যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে নিহতের সংখ্যা আরো বেশি- ৮ হাজার ৫৪৩ জন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাই সর্বাধিক। প্রতিবছর আহত হন অন্তত ৫ কোটি মানুষ। এদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৭০। এতে নিহত হন ৩ হাজার ৯১ জন। বেপরোয়া গতি ও ট্রাফিক আইন না মানাকে এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) মোহা. যোবায়ের হোসেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিরাপত্তা নিয়ে ভয় না পেয়ে অভিযোগ করার প্রবণতা গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্রাফিক আইন ও নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে গণপরিবহনে নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা আসনের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, চালক ও হেলপারদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়াÍএসব কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুলের ম্যানেজার মাইনুল হোসেনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) উম্মে কুলসুম সম্পা। তিনি বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনা শুধু প্রাণহানি ঘটায় না, বরং পরিবারের অর্থনৈতিক স্থিতি নষ্ট করে দেয়। একজন উপার্জনকারী হারালে পুরো পরিবার দারিদ্র্যের মধ্যে তলিয়ে যায়।” তিনি আরো বলেন, “মেয়েরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। এক্ষেত্রে নারীদের নিজেদের নিরাপত্তা বুঝে নিতে হবে। পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।”