মোহা. আশরাফুল আলম সিদ্দিকী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা ঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় চলমান একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শহরের অবকাঠামো, সেবা এবং নগর ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে। ইতোমধ্যে সড়ক সংস্কার, ড্রেনেজ নির্মাণ, খাল পুনঃখনন, জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ একযোগে চলমান থাকায় নাগরিক সেবায় দৃশ্যমান উন্নতি চোখে পড়ছে। এসব চলমান উন্নয়ন দেখে দারুন খুশি পৌরসভার নাগরিকগণ। পৌর এলাকায় প্রধান ও অলি গলির সড়কে নতুন কার্পেটিং, কংক্রিট ব্লক কাজ ও ড্রেন নির্মাণ অধিকাংশ স্থানে সম্পন্ন ও চলমান রয়েছে । বিশেষত বর্ষাকালে দীর্ঘদিন ধরে যে জলাবদ্ধতার সমস্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হতো, তা অনেকটাই কমে যাবে। যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রমও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাল নবাব খাল, নয়াগোলা খাল ও রেলওয়ের বরো পিট খাল, পুনঃখননের কাজ করে শহরের জলাধার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদিত এই প্রকল্পের মোট বাজেট প্রায় ৪৮ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং প্রকল্প মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত। প্রকল্পের অর্থের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য ২০ কোটি টাকা এবং পুনঃখননের কাজের জন্য ২৮ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনটি খালের মোট সাড়ে ১২ কিলোমিটার অংশকে পাঁচটি প্যাকেজে ভাগ করে পুনঃখনন করা হবে এবং মাঠ পর্যায় কাজ শুরু হচ্ছে নভেম্বরে। খালগুলো পুনঃখনন করে অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করলে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের পথে ফিরে আসবে, ফলে বাজার এলাকা, কলেজ রোড, শান্তি মোড়, রেলস্টেশন সংলগ্ন সড়ক ও অন্যান্য আবাসিক এলাকা গুলো জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খালগুলো প্রায় ভরাট হয়ে গেছে এবং দখল দূষণে নর্দমায় পরিণত হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শহরের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ মো. ইমরান হোসেন জানান, জলাবদ্ধতা নিরসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। অতিবৃষ্টির প্রভাবে শহরের পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল রাখা এবং খাল পুনঃখনন অত্যন্ত জরুরী। খাল খননের কাজ শেষ হলে ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সকল ড্রেনের পানি খননকৃত খালের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হবে। এছাড়া বাকি ১০টি ওয়ার্ডের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজও সমাপ্ত করে মহানন্দা দ্বিতীয় সেতুর পশ্চিম পাশে মহানন্দা নদীর সাথে সংযুক্ত করা হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার আওতাধীন দ্বিতীয় মহানন্দা সেতু থেকে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সেতুর সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে চলছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদিত হয় ৩০ আগস্ট ২০১৮। মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা বর্তমানে বাড়িয়ে ৩০৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয় ১ জুলাই ২০১৮ এবং নির্ধারিত ছিল ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত। তবে কাজের অগ্রগতি ও প্রয়োজন বিবেচনায় প্রকল্পটি দুই দফা সময় বাড়ানো হয়েছে, প্রথমে জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত এবং সর্বশেষ বাড়ানো মেয়াদ অনুযায়ী প্রকল্পের সময়সীমা এখন জুন ২০২৬ পর্যন্ত। প্রকল্পের জন্য অধিগৃহীত জমির পরিমাণ ২১.৮৬ একর। বর্তমানে ৮০% কাজ শেষ হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির জানান, গত দুই বছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রয়েছে। সড়ক সংস্কার, ড্রেনেজ নির্মাণ, খাল পুনঃখনন ও জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ সম্পন্ন হলে মূল শহরের ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চেহারা পরিবর্তিত হবে। এছাড়া ডায়াবেটিক সেন্টার মোড় এলাকায় নতুন কাঁচা বাজার, মুরগি ও মাংসের পট্টি স্থানান্তরিত হলে শহরের যানজট কমবে। পাশাপাশি ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে সোনার মোড়ের চক্ষু হাসপাতালের পাশে আধুনিক মানের কসাইখানা নির্মাণ চলছে। তিনি আরও আধুনিক বর্জব্যাবস্থার দাবী করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কামাল উদ্দিন স্কুল থেকে ডায়াবেটিক সেন্টার মোড় পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণ ও আধুনিক ড্রেনেজ নির্মাণ কাজ চলমান। একইভাবে শান্তি মোড় থেকে কলেজ রোড ও নিউ মার্কেট হয়ে জেলা পশু হাসপাতাল পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণ ও ড্রেনেজ উন্নয়ন কাজও চলছে। শান্তি মোড় থেকে মহানন্দা

সেতু পর্যন্ত রাস্তার কাজও শিগগিরই শুরু হবে। এছাড়া শান্তি মোড়, মেডিক্যাল মোড় হয়ে পিটিআই মোড় ও সার্কিট হাউস রোডে আধুনিক রোডবাতির কাজ করা হবে। পুরাতন বাজার থেকে শিবতলা মোড় পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারন করা হবে। এছাড়া সোনার মোড় এলাকায় আধুনিক কসাইখানা ও ডায়াবেটিক্স মোড়ে আধুনিক মানের বাজারের কাজ ৮০% শেষ হয়েছে। এসব প্রকল্প সম্পন্ন হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সামগ্রিক উন্নয়ন চিত্রে বড় পরিবর্তন আসবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সচেতন নাগরিকগন বলেন সোনারমোড় এলাকায় আধুনিক কসাইখানা ও ডায়াবেটিক্স মোড়ে আধুনিক সবজি বাজার নির্মিত হলে শহরের জানজোট অনেকটাই কমে আসবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক উজ্জল কুমার ঘোষ জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় বর্তমানে যেভাবে উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী ২০২৬ সালের শেষের দিকে জানজোট মুক্ত সর্বাধুনিক পৌরসভা হিসেবে দেশের মধ্যে উন্নত পৌরসভা হিসেবে চিত্রায়িত হবে।