খুলনা ব্যুরো ও ডুমুরিয়া উপজেলা সংবাদদাতা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, পিআর পদ্ধতি ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনকে গ্রহণ করবে না। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে এবং জুলাই সনদ জুলাই মাসেই ঘোষণা করতে হবে। সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেবো না। খুনিদের দৃশ্যমান বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের ভেতরে কোনও ফ্যাসিবাদী থাকতে দেওয়া হবে না।’ তিনি আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচন শুধু নির্বাচন নয়; বিপ্লব পরবর্তী জন আকাঙ্খার প্রতিফলনের মহাসুযোগ। ফ্যাসিস্টদের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার পর ইতোমধ্যেই দেশ নির্বাচনী ট্রেনে উঠেছে। প্রার্থীগণ প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীদের ওপর হামলা, পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটছে। প্রশাসন নিরপেক্ষ না হলে নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করা যাবে না। কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন দুর্বল থাকলে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এ বিষয়ে সরকারকে সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে যে, যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না, সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য দরকার নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার। এই ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতা চাইলে করা হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে এবং ন্যায় ও ইনসাফের উপর দাঁড় করিয়ে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে জামায়াত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের মুখে হাসি ফুটানো, জীবনমান উন্নতকরণ ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জামায়াত কাঙ্খিত ভূমিকা পালন করবে। সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার মাধ্যমে জামায়াত জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সারা দেশে জামায়াতের প্রতি ব্যাপক জনমত তৈরি হয়েছে। আগামী দিনে একটি ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার জন্য জনগণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এমতাবস্থায় সকল দেশপ্রেমিক জনগণকে দেশ ও দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে। রোববার (৩০ জুন) খুলনা-৫ আসনের নির্বাচনী এলাকায় দিনব্যাপী মতবিনিময় সভা ও গণসংযোগকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

এর আগে সকাল ৭ টায় অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার তার নির্বাচনী এলাকা ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের বসুন্দিয়া বাজারে পথসভা, সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের মতবিনিময়, ভুলবাড়িয়া, গজেন্দ্রপুর সেন পাড়ায় মতবিনিময় সভা, দুপুর সাড়ে ১২টায় ভুলবাড়ীয়া কওমী মাদাসায় মত বিনিময়, বিকেল ৪ টায় চাঁদগড়ে পথসভা, বিকেল ৫ টায় বানিয়াখালি বাজারে মতবিনিময় সভা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শরাফপুর বাজারে গণসংযোগ করেন। এ ছাড়া তিনি সাবেক চেয়ারম্যান জাহাবক্স বিশ্বাস ও সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় তাদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন। সভাপতিত্ব করেন মাওলানা আব্দুল হাকিম ও পরিচালনা করেন হারুন অর রশীদ।

এ সব প্রোগ্রামে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মুখতার হুসাইন, নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান ও গাজী মো. সাইফুল্লাহ, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি এডভোকেট আবুল খায়ের, খুলনা জজকোর্ট এর এডিপি এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বিএল কলেজ’র ভিপি এডভোকেট শেখ জাকিরুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সহকারী স্পোর্টস সেক্রেটারি হাফেজ বেলাল হুসাইন, ঢাকাস্থ খুলনা ক্লাবের সভাপতি সরদার আবদুল ওয়াদুদ, খুলনা জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, ভুলবাড়ীয়া কওমী মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা শামীম আহম্মেদ, মাস্টার নুরুল ইসলাম, শাহাজান আলী বাবুল মেম্বর, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শরাফপুর ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা ইব্রাহিম খলিল, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের শরাফপুর ইউনিয়ন সভাপতি সরদার শাহাজান আলী বাবুল মেম্বর, মঞ্জুরুল ইসলাম, মনজেল মেম্বর, মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা গোলাম মোস্তফা, সরদার আবদুল ওয়াদুদ, ইমাম মাওলানা মফিজুল ইসলাম, ডুমুরিয়া উপজেলা সনাতন ধর্মাবলম্বী কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেবপ্রসাদ, কোষাধ্যক্ষ মাস্টার গৌতম মন্ডল, মাওলানা হাফিজুর রহমান, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল হান্নান, শেখ মোসলেম উদ্দিন, হাফেজ মঈন উদ্দীন, মাওলানা রবিউল ইসলাম, মাওলানা গোলাম মোস্তফা, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা গোলাম রব্বানী, ক্বারী সাজ্জাদ হোসেন, হাফেজ আব্দুল হাকিম, হাফেজ আব্দুল বারী, দেব প্রসাদসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও জনসাধারণ অংশ গ্রহণ করেন

বিগত সরকারের জুলুম নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে গুম, খুন, হত্যা, রাহাজানি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ছিলো তাদের কাছে সাধারণ ঘটনা। এগুলির বিরুদ্ধে কথা বললেই মামলা হামলা দিয়ে রাষ্ট্রীয় মদদে তাদের হত্যা, গুম, খুন করা হতো। অর্থনৈতিকভাবে দূর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে বিদেশে লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশকে খাদের কিনারে নিয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয় ইসলাম প্রিয় দেশপ্রেমিক আলেম-উলামাদেরকে বিনা অপরাধে জুলুম নির্যাতন চালিয়ে কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে বছরের পর বছর রেখেছিল। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক কেড়ে নিয়ে আমাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। আল্লাহর রহমতে আমাদেরকে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে আজ তারাই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। আর আমরা আদালতের মাধ্যমে নিবন্ধন ও প্রতীক পেয়েছি। তাই সময় এসেছে আগামী নির্বাচনে ইসলাম প্রিয়, আল্লাহ ভীরু, সৎ লোককে ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠানো যাতে তারা একটি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারে যে রাষ্ট্র গঠন করেছিলো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.), যেখানে থাকবে না কোন বৈষম্য, লুটপাট, দূর্নীতি ও দুঃশাসন।

সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতাকে ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার বোন রেহেনাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে ২ হাজার ছাত্র-জনতাকে খুন করেছে। ২০ হাজারের মত মানুষ আহত হয়ে অন্ধ ও পঙ্গুত্ববরণ করেছে। অনেকেই এখনও হাসপাতালে মৃত্যুও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছর বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারে নাই। দিনের ভোট রাতে, ১৫৪ আসনে নির্বাচনের আগে এমপি হয়ে গেছে সর্বশেষ আমি আর ডামি নির্বাচন হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে গেলে রাস্তায় ছাত্রলীগ যুবলীগ, পুলিশ লীগ ভোটারদের ফিরিয়ে দিয়েছে ভোট হয়ে গেছে বলে। ১৫/১৬ বছর জামায়াত বিএনপি নেতাকর্মী, আলেম উলামাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি জেল, জুলুম অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছে। ফলে ২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে স্বৈরাচারের পতনের পর নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারের কাছে দাবি, গুম ও খুনের বিচার, আহতদের পুর্নবাসন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় জনগণ মেনে নেবে না।