মোঃ ফিরোজ আহমেদ পাইকগাছা, খুলনা : বাংলাদেশের এক অতিপরিচিত প্রান্তিক যাযাবর গোষ্ঠী হলো বেদে, যারা সাধারণত বাদিয়া বা বাইদ্যা নামে পরিচিত। একসময় সাপ খেলা, ভেষজ বিক্রি, আর হাতুড়ে চিকিৎসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করলেও, আধুনিকতার ছোঁয়ায় তাদের সেই ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। এই শীতে, খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেদে বহর অস্থায়ীভাবে তাঁবু ফেলেছে, কিন্তু তাদের সাবেক পেশায় আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় তাদের জীবনযাত্রায় এসেছে নানামুখী পরিবর্তন।
পাইকগাছায় বেদে বহর: জীবন সংগ্রামের নতুন অধ্যায়
শীতের শুরুতেই পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর খেলার মাঠ ও শিবসা ব্রিজের পাশে বালির মাঠে পলিথিন ও বাঁশের চটা দিয়ে তৈরি ১০থেকে ১৫ টি অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩০ জনের একটি বেদে দল, যার মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। তারা মূলত যশোরের বারো বাজার থেকে এসেছেন।
ঐতিহ্যবাহী পেশাঃ গ্রামে গ্রামে ঘুরে এই যাযাবরেরা এখনও তাদের পুরোনো পেশা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন:
গাছের শিকড়, তাবিজ-কবচ বিক্রি।
জাদু খেলা ও বানরের খেলা দেখানো।
শিঙ্গা লাগানো, দাঁতের পোকা ফেলা ও জোঁক ফেলার মাধ্যমে হাতুড়ে চিকিৎসা।
এছাড়াও, পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ে কারো সোনা-র”পা হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করে দেওয়াও তাদের একটি বিশেষ কাজ।
আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
এই দলের নেতা মোঃ সুমন জানান, তাদের পৈত্রিক বাড়ি যশোরের বারো বাজারে। অনেকের সেখানে জমি ও ঘর থাকলেও, জীবিকার তাগিদে বছরের বেশিরভাগ সময়ই তাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে হয়। বর্ষাকাল শুরু হলে তারা নিজ বাড়িতে ফিরে যান। আর যাদের জমি-ঘর নেই, তারা নির্দিষ্ট স্থানে তাঁবুতে বা নদীতে বেদে বহরে বসবাস করেন। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বর্তমানে বেদেদের ঐতিহ্যবাহী পেশাগুলোতে আয়-রোজগার মারাত্মকভাবে কমে গেছে।
নেতা মোঃ সুমন বলেন, “আগে আমাদের এই কাজগুলোই ছিল প্রধান আয়ের উৎস। কিন্তু এখন মানুষজন আর আগের মতো সাপ খেলা বা হাতুড়ে চিকিৎসায় ভরসা করে না। আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসতেই হচ্ছে।”
জীবনযাপনে পরিবর্তন: নতুন পেশায় জীবিকা নির্বাহ
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই যাযাবর গোষ্ঠী এখন টিকে থাকার জন্য নতুন পেশার দিকে ঝুঁকছেন। বাধ্য হয়ে এখন তাদের অনেককেই: কৃষি বা দিনমজুরির কাজ করতে হচ্ছে।
ফেরি করে নানা জিনিস বিক্রি করতে হচ্ছে।
তাদের প্রাচীন জীবনধারা ও সংস্কৃতি আজ এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। একদিকে ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা, অন্যদিকে আধুনিক সমাজে টিকে থাকার সংগ্রামÍ সব মিলিয়ে যাযাবর বেদে গোষ্ঠীর জীবনধারা এক দুর্বিষহ অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে।