ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা : ঠাকুরগাঁওয়ে একটি গ্রামে একাধিক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সেই গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি গভীররাতে কে বা কারা এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রায় নিয়মিতভাবেই দু একদিন পর পরই ঘটছে আগুন লাগার এ ঘটনা। বিশেষ করে ভোরে এমনটা ঘটাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। নিয়মিতভাবে আগুনের এ ঘটনা ঘটছে ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানার ১ নং রুহিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ঘণিমহেষপুর গ্রামে। গত তিন মাস ধরেই এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী প্রায় ১৫টি পরিবার। তবে রহস্যজনকভাবে রমযান মাসে বন্ধ ছিল আগুনের ঘটনা। রুহিয়া উত্তরা বাজার জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম হামিদুর রহমান জানান, গত তিন মাস আগে কাদো রাম এর বাসা থেকে এ অগ্নিকান্ডের সূচনা হয়। এ পর্যন্ত একটার পর একটা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে চলেছে। আমরা সবাই একটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। শেষ গত মঙ্গলবার ফজরের নামায পড়ে মসজিদ থেকে বের হতেই চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে দেখি তৈমুরের বাড়িতে আগুন লেগেছে। এলাকাবসির চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ আসে, তবে ততক্ষণে খরের গাদা ও খড়ির ঘর পুড়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ভুক্তভোগী তৈমুর রহমান বলেন, লোকজন যখন ঘুমিয়ে পরে তখনি এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আমার ও অন্য গ্রামবাসীদের এ অগ্নিকা-ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মিরা আসতে আসতে আমাদের অনেক কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সারাদিন কৃষিকাজ করে এভাবে রাত জেগে পাহারা দেয়া সম্ভব না। এটা আমাদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। এটা জিন ভূতের কাজ না, এটা মানুষেরই কাজ। আমরা বাচ্চাদের নিেেয় অনেক ভয়ে ভয়েই রাতে ঘরে থাকছি।

আনোয়ার হোসেন ও ফারুখ হোসেন নামের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আমরা একটা সালিশের ব্যবস্থা করেছিলাম। তাতে কিছুদিন এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা বন্ধ ছিলো। তবে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর তা আবারো ঘটছে নিয়মিতভাবেই। আমাদের বাচ্চারা এখন ঘরে থাকতেই ভয় পায়। এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে থানায় মৌখিক অভিযোগ করলে থানা থেকে পুলিশ এসে উল্টো আমাদেরকেই বলে দুস্কৃতিকারীদের ধরিয়ে দিতে।

গত তিন মাসে একই গ্রামের কাদো রাম, খোরশেদ, মকবুল, দারাজ উদ্দিন, শহিদুলসহ প্রায় ১৫ জনের প্রায় ১৫-১৬টি খড়ের গাদা, গোয়ালঘর ও রান্না ঘরে আগুন লাগে। ফলে আগুন আতঙ্কে রাত-দিন পার করতে হচ্ছে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির মানুষকে। কে বা কারা আগুন দিচ্ছে, রাত জেগে পাহারা দিয়েও তাদের ধরতে পারছেন না গ্রামবাসী। ওই গ্রামে বেশিরভাগ আগুন লাগার ঘটনায় আগুনের উৎস পাওয়া গেলেও গভীররাতে খড়ের গাদায়, রান্নাঘর ও গোয়াল ঘরে আগুন লাগার কারণ জানেন না ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা। তবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে খুব দ্রুতই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পবেন বলে আশা করছেন তারা।

রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) নাজমুল হোসেন মুঠোফোনে জানান, রুহিয়া ঘনিমহেষপুর গ্রামের নিয়মিতভাবে আগুন লাগার ঘটনায় মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তবে কেউ এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন,আমরা বিষয়টি সম্পর্কে জানার পর ইতোমধ্যেই সেখানে আমাদের টহল বাড়িয়েছি। এছাড়াও এ বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় তদন্ত করে দোষীদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।