পায়ে হেঁটে অথবা রিকশা-ইজিবাইকসহ যে কোনো যানবাহনে যেতে গেলে দুর্গন্ধে নি.শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। নাকে রুমাল বা কাপড় দিয়েও এই দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় নেই। বছরের পর বছর ময়লার স্তুপের এই নোংরা-দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ বিরাজ করছে খুলনার প্রবেশদ্বার গল্লামারিতে। হাজার হাজার যাত্রী, পথচারী, ব্যবসায়ী, পার্শ্ববর্তী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়ে দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ময়ূর নদীর পশ্চিমপাড়ে গল্লামারী বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। এলাকাটি বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের মধ্যে পড়ায় কেসিসি ওই বর্জ্য অপসারণ করছে না। বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রশাসনও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে ময়লা স্তূপের দুর্গন্ধে এখানকার বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারীরা প্রতিদিন নাক চেপে বিরক্তির সাথে এ পথে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, ‘খুলনা মহানগরীতে প্রবেশের যে কয়টি পয়েন্ট রয়েছে গল্লামারি তার মধ্যে অন্যতম। খুলনা-মোংলা হাইওয়ে, খুলনা-সাতক্ষীরা, বটিয়াঘাটা-দাকোপ রুটসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মানুষ গল্লামারি হয়ে শহরে প্রবেশ করে। এছাড়া গল্লামারি মোড়ে রয়েছে বিশাল বাজার। যেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নিয়মিত বাজার করতে আসেন। নিকটেই ঐতিহ্যবাহি বিদ্যাপিঠ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, ইজিবাইক স্ট্যান্ড, শিশুসদন হাসপাতালসহ ছোট বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অথচ গল্লামারি মোড়ের এই ময়লার স্তুপ জনজীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। শুধু গল্লামারি মোড়ের বাজারের ব্যবসায়ী নয়, পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা আবর্জনা আশেপাশের নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে না ফেলে প্রতিদিন এখানে ফেলছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, ইজিবাইক চালক ও পথচারীদের অভিযোগ, খুলনা সিটি কর্পোরেশনসহ প্রশাসনের নিকট অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রিপন মন্ডল বলেন, “এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। একাধিকবার আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা উদ্যোগ নিয়েছি এই বর্জ্য অপসারণের জন্য। কিন্তু কোনো সুফল হয়নি।” বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বর্ষের ছাত্রী সঞ্চিতা সরকার ও তানিম মল্লিক বলেন, “সকাল-বিকেল আমাদের গল্লামারী বিভিন্ন কাজে যাওয়া লাগে। দ্রুত এই বর্জ্য অপসারণ না করলে চলাচলের জন্য রাস্তাটি একদম অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। এই দুর্গন্ধ সহ্য করা অত্যন্ত কষ্টকর। প্রতিদিন রাস্তা পার হতে গেলে এই ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানির উপর দিয়ে আমাদের পার হতে হয়।” স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. শরিফুল ইসলাম ও আলতাফ মোল্লা বলেন, “ভাই এখানে আমাদের ব্যাবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধের কারণে কোনো কাস্টমার আসতে চায় না। বহুবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয় না। সাংবাদিকরা আসে আর ছবি তুলে নিয়ে চলে যায়। কিন্তু ময়লা, ময়লার জায়গায় থেকে যায়।” ইজিবাইক চালক আব্দুল করিম, আলতাপ ও মহসিন বলেন, “দুর্গন্ধের কারণে আমরা এখানে থাকতে পারি না। গাড়িতে যাত্রী উঠতে চায় না।”
খুবি’র এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন শিক্ষক (সহকারী অধ্যাপক) সাধন চন্দ্র স্বর্ণকার বলেন, “খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার গল্লামারী এলাকাটি এখন এক অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য ফেলার স্থানে পরিণত হয়েছে। আশপাশের বাজার ও বসতবাড়ির বর্জ্য প্রতিদিন রাস্তার ডিভাইডার ও ছাত্রহল সংলগ্ন রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। সম্প্রতি পুরো এলাকার জমাকৃত বর্জ্য একটি কেন্দ্রীয় স্থানে ফেলা শুরু হওয়ায় দুর্গন্ধ, ময়লা পানি ও পিচ্ছিল রাস্তার কারণে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষের চলাচলে তীব্র অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় বায়ু, পানি ও মাটিতে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটি গুরুতর পরিবেশগত ও জনস্বার্থ ঝুঁকির সৃষ্টি করছে।”
খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. সাদিকুল ইসলাম বলেন, “গল্লামারী এলাকা আমাদের নয়। তবুও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খুলনা সিটি কর্পোরেশনকে আমরা অবহিত করব। প্রয়োজনে আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
কেসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. অহিদুজ্জামান বলেন, “ময়ূর নদীর এপার পর্যন্ত কেসিসির সীমানা। ওপারে ব্যবসায়ীদের জন্য কেসিসির একটি কনটেইনার দেওয়া রয়েছে। সেটি নিয়মিত উপজেলা প্রশাসনের পরিষ্কার করা কথা ছিল। তারাই বিষয়টি নিয়ে ভালো বলতে পারবেন।”
এ ব্যাপারে বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা তান্নি বলেন, “ময়লা অপসারণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”