DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

গ্রাম-গঞ্জ-শহর

রাজশাহীতে ইফতারের বিশেষ আকর্ষণ শাহী ফিরনি ও বাটার মোড়ের জিলাপি

রমযানে আধুনিক ইফতারসামগ্রীর ভিড়েও রাজশাহীতে এখনো জায়গা ধরে রেখেছে ঐতিহ্যবাহী শাহী ফিরনি ও বাটার মোড়ের জিলাপি। যুগের পর যুগ এই খাবারগুলো রাজশাহীর ইফতার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।

রাজশাহী ব্যুরো
Printed Edition
Rajshahi-Iftaer-Pic-07.03
রাজশাহী: ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় রাজশাহীর বাটার মোড়ের জিলাপি ও শাহী ফিরনি -সংগ্রাম

রমযানে আধুনিক ইফতারসামগ্রীর ভিড়েও রাজশাহীতে এখনো জায়গা ধরে রেখেছে ঐতিহ্যবাহী শাহী ফিরনি ও বাটার মোড়ের জিলাপি। যুগের পর যুগ এই খাবারগুলো রাজশাহীর ইফতার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। গণকপাড়া মোড়ের রহমানিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁর এই শাহি ফিরনি ১৯৫০ সাল থেকে তৈরি হচ্ছে। ছোট ছোট মাটির পাত্রে সাজিয়ে রাখা ফিরনি প্রতিটি ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার বাসিন্দা এন্তাজ আলী জানান, ইফতারের জন্য আরও অনেক কিছু কেনা হলেও ফিরনি তাদের মতো বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়।

রহমানিয়া হোটেলের বর্তমান মালিক রিয়াজ আহাম্মেদ খান জানান, তার দাদা আনিছুর রহমান খান প্রথম এই ফিরনি তৈরি ও বিক্রি শুরু করেন। এরপর তার বাবা ব্যবসার হাল ধরেন, এখন তিনিই সেই ঐতিহ্য বহন করছেন। রিয়াজ আহাম্মেদ বলেন, “শুরুতে এক বাটি ফিরনি চার আনায় বিক্রি হতো, এখন তা ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। রমযানের প্রথম দিনেই ৪০০ বাটি ফিরনি বিক্রি হয়েছে, যা আরও বাড়বে। গত বছর প্রতিদিন এক হাজার বাটি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।” ফিরনির প্রধান উপাদান হলো খাঁটি গরুর দুধ, সঙ্গে থাকে চালের গুঁড়া, চিনি ও কিছু ফল।

নগরীর বাটার মোড়ে অবস্থিত একটি দোকানে মচমচে জিলাপি বিক্রি হয়, যা ‘বাটার মোড়ের জিলাপি’ নামেই পরিচিত। দোকানটির নেই কোনো নাম বা সাইনবোর্ড, তবুও প্রতিদিন ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। সারা বছরই জিলাপি বিক্রি হলেও রমযানে এর চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। প্রতি কেজি জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। গোরহাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা হাফিজ উদ্দিন বলেন, “এখানকার জিলাপির স্বাদ আলাদা। রমযানে অন্তত ১০-১২ দিন এখান থেকে জিলাপি কিনি।”

জানা যায়, ১৯৫০ সালে সোয়েব উদ্দিন এখানে জিলাপি বানানো শুরু করেন। প্রথম কারিগর ছিলেন জামিলী সাহা, পরবর্তীতে তার ছেলে কালীপদ সাহা এই ব্যবসার হাল ধরেন। ২০১৭ সালে তিনি মারা গেলে তার শিষ্য মো. সাফাত এখন জিলাপি বানাচ্ছেন। বর্তমানে সোয়েব উদ্দিনের চার ছেলে দোকানটি চালাচ্ছেন। তাদের একজন, মো. হাসিম উদ্দীন জানান, “সততা ও ভালো মানের উপকরণের কারণেই এত বছর ধরে আস্থার সঙ্গে টিকে আছে এই দোকান।” ৪২ বছর ধরে জিলাপি তৈরি করা কারিগর মো. সাফাত বলেন, “সঠিক উপকরণ ও পরিমাণ মেনে তৈরি করলেই জিলাপি মচমচে ও সুস্বাদু হয়।” রাজশাহীর এই দুই ঐতিহ্যবাহী ইফতার আইটেম আজও রমযানের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে সমাদৃত।