প্রায় দুই যুগ ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের মধ্যে খুলনা জেলার পাইকগাছার ভরাট হওয়া শিবসা নদী খননকাজ সীমাবদ্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের নীরবতার কারণে নদীর বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এক সময়ের খরস্রোত প্রমত্তা শিবসা নদী। যার একূল-ওকূল দেখা যেত কুয়াশার মতো। এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে যেতে হলে নদী পারাপারের কোন বিকল্প ছিলনা। এ জন্য ছিল খেয়াঘাট ও লঞ্চঘাট। ঘাটে থাকত সারি সারি নৌকা। থাকত খেয়ার নৌকা, আবার থাকত ‘জলদি নৌকা’। প্রচন্ড ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে নৌকা চড়তে হতো সে সময়। এমনকি পাল তোলা নৌকাও চলত এ নদীতে। এ ছাড়াও দিনরাত চলত লঞ্চ, স্টিমারসহ বিভিন্ন নৌযান। কয়রা-পাইকগাছা ও বড়দল এলাকার লোকজন এ নদীপথেই খলনা ও মোংলা বন্দরে যাতায়ত করতো। এখন সব কিছুই শুধু স্মৃতি মনে হয়। রূপ কথার গল্পের মতো। বর্তমানে নদীতে সাধারণ জনগণ পায়ে হেটে চলাচল করছে। বিশাল অংশ চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। নদী পরিণত হয়েছে গোচারণ ভূমিতে। এদিকে পৌরসভায় শহররক্ষা বাঁধের নামে নদীর মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরি করে অনেকেই শত শত বিঘা দখল করে নিয়ে চিংড়ি চাষ করছে। তৈরি করেছে বাড়িঘর ও স্থাপনা। শিববাটী ব্রিজ থেকে হাড়িয়া পর্যন্ত শিবসা নদীর ১৫ কিলোমিটারের সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বিষয়টা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে অনেক লেখালেখি, আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। বিভিন্ন সময় তৎকালীন সদস্যরা আশ্বাস দিয়েছেন, এইতো টাকা বরাদ্দ হয়েছে, খুব শিগগিরই খনন শুরু হবে। শুনতে শুনতে ২০ বছরের বেশি চলে গেছে। সবকিছুই তাদের আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।
নৌকার মাঝি হাজু দাশ বলেন, বাবার হাত ধরে নৌকার মাঝি হয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। মানুষ পার করে সংসার চলত। এখন নদী নেই সেকারণে আমাদের পেশা বদল করতে হয়েছে। আয়-রোজগার কমেছে।
শামসুর মাঝি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে খুলনা থেকে পাইকগাছা বাজারের ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়া করছি। এখন নদী ভরাট হওয়ার কারণে অনন্ত ২০ কিলোমিটারের বেশি ঘুরে মালামাল শিববাটী ব্রিজের নিচে নামাতে হয়। ফলে মালামাল পরিবহনে খরচ বাড়ছে। নদী খনন হলে পাইকগাছার ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। নদীর কারণে হয়তো আমার এ ব্যবসা ছাড়তে হবে।
পাইকগাছার সিনিয়র সাংবাদিক জি এম মিজানুর রহমান বলেন, শিবসা নদীটি এ অঞ্চলের মানুষের এখন গলার কাটা হয়েছে। ভূমিদস্যুরা চর ভরাটী জমি দখল করে নিচ্ছে। অচিরেই নদীটি খনন করা প্রয়োজন।
পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা শিবসা নদী খননের জন্য প্রায় ২০ বছর আন্দোলন করছি। বিগত সকল সংসদ সদস্যরা আমাদের খননের জন্য আশ্বাস দিয়ে পাইকগাছাবাসীকে আশাহত করেছে। অচিরেই এ নদী খনন করতে না পারলে শিবসা নদী মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। পৌরবাসী বন্যায় আক্রান্ত হবে।
পাইকগাছা উপজেলা পানি উন্নযণ বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দীন (সাবেক) বলেন, আমি পাইকগাছায় থাকালীন সময়ে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে বার বার লিখেছি। তবে কোন কাজ হয়নি। বর্তমান কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন বলেন, পাইকগাছাবাসীর জন্য শিবসা নদী খনন খুবই জরুরি। এটা না হলে পাইকাগাছা বার বার জলাবদ্ধতার শিকার হবে।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহের নাজনীন বলেন, শিবসা নদী খনন হলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে পাইকগাছাবাসী রক্ষা পাবে। দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হবে।