কবির আহমদ, সিলেট ব্যুরো : টানা ৪ দিনের বৃষ্টিতে বিভাগীয় নগরী সিলেটে বন্যার পদধ্বনি। গতকাল শনিবার পানিবদ্ধতায় গোটা সিলেট যেন অচল হয়ে পড়েছে। বিকাল ৫ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এক মুহূর্তেই জন্য সিলেটে বৃষ্টি থামেনি। আবার আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টি হওয়ায় উত্তাল হয়ে উঠেছে সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারা। সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পিআইন ও সারি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ফলে এই দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী। নগরীর অধিকাংশ রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ী এমনকি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের নিচতলা ডুবে গেছে বৃষ্টির পানিতে। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরবাসী। চোখ রাঙাচ্ছে সেই ২০২২ সালের মহা দুর্যোগ।
গত বুধবার রাত থেকে গতকাল শনিবারের ভারী বৃষ্টিতে সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কোথাও হাঁটু পানি, কোথাওবা কোমর সমান। এ অবস্থায় বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ নেই। আবহাওয়ার যা পূর্বাভাস, আগামী কয়েকদিন এ অবস্থা চলতে থাকবে।
সিলেট অঞ্চলে গত বুধবার রাত থেকেই থেমে থেমে ঝরছিল বৃষ্টি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টি। শুক্রবারেও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সিলেট মহানগরীর নি¤œাঞ্চলগুলোতে পানি উঠার খবর পাওয়া গেছে।
তবে গতকাল শনিবার দিনব্যাপী ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়েছিল নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার, হাওয়াপাড়া, শিবগঞ্জ, অভিজাত নগরী উপশহর, কুয়ারপাড়, তোপখানা, বঙ্গবীর রোড, লাউয়াই, বারুতখানা, মাছিমপুর, ছড়াড়পাড়, চালিবন্দর, যতরপুর, তেররতন, কুমারগাও, পাঠানটুলাসহ বিভিন্ন এলাকা।
এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনে জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর দুর্ভোগের বিষয় জানতে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেকোন জরুরী পরিস্থিতিতে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সুরমা-কুশিয়ারা উত্তাল
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপটি সরে গেলেও তার প্রভাব রয়ে গেছে। টানা বর্ষণ চলছে সিলেট অঞ্চলজুড়ে। আবার উজানে ভারতের আসাম এবং মেঘালয়েও হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। এর পানিও নেমে আসছে।
এ অবস্থায় সিলেটের নি¤œাঞ্চলের কিছু কিছু অংশ ডুবে গেছে। ফুঁসছে সুরমা-কুশিয়ারাও। বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও যখন তখন দুকূল ছাপিয়ে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখী হতে পারে পুরো সিলেট বিভাগ।
গত কয়েকদিন ধরেই সিলেট অঞ্চলে বন্যার পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির কারণে বরাবরই সিলেট অঞ্চল ভেসে যায়। এটা প্রতি বর্ষায়ই হয়।
এবারও তাই হচ্ছে। গত বুধবার রাত থেকে সিলেটজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরছিল। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার পরিমাণ ছিল প্রায় ২২৯ মিলিমিটার। গত শুক্রবার রাত আর গতকাল শনিবার মিলে এ অঞ্চলে চলছিল তুমুল বৃষ্টিপাত, যাকে বলে মুষলধারে বৃষ্টি। এমন বর্ষণে জনজীবনতো অচল হয়েই পড়ে।
এদিকে আবার ক্ষণে ক্ষণে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সুরমা কুশিয়ারার পানি। গত শুক্রবার বিকেলেও বিপৎসীমার কয়েক ফুট নিচে থাকলেও রাতেই তা আশঙ্কাজনক পর্যায়ের দিকে যেতে থাকে। বর্তমানে সুরমা-কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার উপরে রয়েছে।
বৃষ্টি কেবল সিলেটেই ঝরছে, তা না। ঝরছে উজানেও, ভারতের আসাম এবং মেঘালয় রাজ্যে। ভারী না, রীতিমতো অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে সেখানে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে মোট ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আসাম মেঘালয়ের বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে আসে সুরমা কুশিয়ারা এবং সারি, সারিগোয়াইন, লোভাছাড়ার মতো পাহাড়ী নদী হয়ে। আর তখন দুকূল ছাপিয়ে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সুরমা-কুশিয়ারা যেভাবে ফুঁসছে, যখন তখন বন্যা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীতে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ২ দশমিক ৫২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় বইছিল বিপৎসীমার ১ দশমিক শূন্য ৪ মিটার নিচ দিয়ে। আর বিকেল ৩টায় এ পয়েন্টে সুরমার পানি বইছিল বিপৎসীমার ১ দশমিক শূন্য ৯ মিটার নিচ দিয়ে। পানি যেভাবে ঘন্টায় ঘন্টায় হ্রাসবৃদ্ধি হচ্ছে, এতে যখন তখন ভয়াবহ বন্যার রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে সিলেট পয়েন্টে সুরমা গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বইছিল বিপৎসীমার দুই দশমিক ১৯ মিটার নিচ দিয়ে। শনিবার সকাল ৬টায় এই পয়েন্ট পানি ছিল বিপৎসীমার ১ দশমিক ৮৬ মিটার নিচে। আর গতকাল বিকেল ৩টার দিকে পানি ছিল ১ দশমিক ৪৯ মিটার নিচে। অর্থাৎ এ পয়েন্টে ৯ ঘন্টায় পানি বেড়েছে ৩৭ সেন্টিমিটার।