নগরবাসীর সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে সবাইকে নিয়ে ক্লিন, গ্রীন, হেলদি চট্টগ্রাম গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। নগরীর চকবাজারের কিশলয় ক্লাবে নগরবাসীর সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি ২০২১ সালের ট্রাইবুনালের মামলায় জিতে মেয়র হয়েছি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অংশ হিসেবে। আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, যেদিন আমার মেয়াদ শেষ হবে আমি আর সাড়ে তিন বছরের জন্য এপ্লাই করবো না। আমি ভোটের অধিকার চাইবো এবং ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে আমি আমার জনপ্রিয়তা কতটুক আছে সেটা আমি যাচাই করবো ইনশাআল্লাহ। এটা আমি আজকে ঘোষণা দিতে চাই সবার সামনে। অনেকে আমাকে বলছে আপনার তো পাঁচ বছর, যেহেতু গত মেয়রের বৈধতা নেই। আপনি কেন খামাখা সাড়ে তিন বছরে চলে যাবেন? আপনি আবার এপ্লাই করেন। আপনি পেয়ে যাবেন। আমি বলেছি না। আমরা চাই এই ভোটের অধিকারের জন্য আমরা আন্দোলন করেছি। এই ভোটের অধিকার অবশ্যই সবার থাকা উচিত। তারা নিশ্চিন্তে যাতে ভোট সেন্টারে গিয়ে এই ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। আমাকে যদি আবারো মেয়র হিসেবে পছন্দ হয় আপনারা ভোট দিবেন। আর যদি আপনারা মনে করেন আমি যোগ্য নই প্রয়োজনে আমাকে আপনারা ভোট দিবেন না। আমি আবার ওই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থাকবো। আন্দোলন সংগ্রামে থাকবো। কোন ভয় আমার নেই। জনগণকে আমরা বিশ্বাস করেছি, জনগণের জন্য আমি রাজনীতি করেছি। আমরা তাই ভোটের অধিকার চাই। আমরা মানুষের মৌলিক অধিকার চাই। কথা বলার স্বাধীনতা চাই।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মেয়র বলেন, আমরা আইনের শাসন চাই। মা বোনের ইজ্জতের নিরাপত্তা চাই। ধর্ষণ যাতে মহামারি আকার ধারণ না করে সে ব্যাপারে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে। আপনারা দেখেছেন আমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হওয়ার পরে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি যেটা ছিল সেটা স্থিতিশীল রাখতে আমি বাজারে বাজারে গিয়ে মনিটরিং করেছি। এই শহরের নিরাপত্তার জন্য আমি কাজ করেছি। শুধু নালা, নর্দমা, খালবিল পরিষ্কার নয় আমাদের এই শহরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিতে হবে।
তিনি বলেন, গত পাঁচই আগস্টের পর থেকে আপনারা দেখেছেন আমরা মঠ-মন্দিরে পাহারা দিয়েছি। আমাদের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় পাহারা দিয়েছে। একটা হত্যাকান্ড অথবা কাউকে মারধর করা হয়নি। তবে, চট্টগ্রামে আলিফ হত্যাকান্ড কারা ঘটিয়েছে আপনারা জানেন। সেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার কিছু হয়েছে, বাকীরা এখনো হয়নি। সবাইকে গ্রেফতারের আওতায় আনতে হবে। এরপরেও এই মুহূর্তে অনেকেই শহরকে অনিরাপদ করার চেষ্টা করছে। আমি স্পষ্ট বলতে চাই যারা শহরকে অনিরাপদ করে আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি করতে চায়, তাদের আমি মেয়র হিসেবে বলতে চাই, এই শহর তোমাদের না, এই শহর আমাদের সবার। আমরা নিরাপত্তা চাই। নিরাপদে আমার জনগণ যাতে নির্ভিঘেœ চলতে পারে সে ব্যাপারে আমি সজাগ আছি। সন্ত্রাসী কারা আমরা জানি। কোন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাস্তানি চলবে না এই শহরে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা এই শহরকে একটা সুন্দর শহরে পরিণত করতে চাই।
এছাড়া ঈদের দিন সকালে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে ‘সবাইকে নিয়ে ঈদ আনন্দ’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মেয়র। স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দারুণ এ উদ্যোগে কয়েক শ শিশুর ঈদের আনন্দ আরও রঙিন হয়ে উঠে।
শুভেচ্ছা বিনিময়কালে ভোটের অধিকার চেয়ে মেয়র বলেন, নব্বই এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হয়েছে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। গত ১৫ বছর ভোটের অধিকার না থাকার কারণে যারা মেম্বার হওয়ার যোগ্য না তারা এমপি হয়ে গেছে। ভোটের অধিকার না থাকার কারণে ভূমিদস্যুরা এমপি হয়ে গেছে। মানব পাচারকারীরা এমপি হয়ে গেছে। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এমপি হয়ে গেছে, মন্ত্রী হয়ে গেছে। ভোট দেয়ার অধিকার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।
সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন জাতীয় মসজিদ জমিয়াতুল ফালাহতে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নাগরিকদের সাথে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। ঈদের পরদিন মঙ্গলবার নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে প্রায় দশ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের জন্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজন করেন মেয়র। ফিন্নি, পোলাওসহ নানা মুখরোচক খাবারের মাধ্যমে মেয়রের আতিথেয়তা গ্রহণ করেন অতিথিরা। একইদিন রাতে কর্ণফুলী নদীতে বে ওয়ান ক্রুজ শিপে নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে মিলন মেলার আয়োজন করেন মেয়র।