বনদস্যুর হাতে নির্যাতন ও অপহরণের ভয়ে মধু আহরণে আগ্রহ হারাচ্ছে সুন্দরবনের মৌয়ালরা। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগর সহ সুন্দরবনে দস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওযায় জেলে ও মৌয়ালদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত বছর পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে সহস্রাধিক মৌয়াল মধু সংগ্রহের জন্য গেলেও এবছর বিশটি নৌকায় মাত্র ১৫০ মৌয়াল মধু সংগ্রহের জন্য বনে প্রবেশ করেছে। তারা আতংক ও ভয় নিয়ে বনে অবস্থান করছেন। পাশের সংখ্যা কম হওয়ায় এ বছর বনবিভাগের মধু আহরনের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ না হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। তবে বনবিভাগ সুত্র জানান, সুন্দরবনে বনদস্যুর বিষয়টি মাথায় রেখে বনরক্ষীদের টহল জোড়দার করা হয়েছে। বনের মধ্যে মৌয়ালদের কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান করবে বনরক্ষীদের স্মার্ট টহলটিম। প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ মওসুম শুরু হয়। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে প্রতিবছর মধু সংগ্রহের জন্য বনে প্রবেশ করে মৌয়ালরা। দুই থেকে তিন মাস বনে অবস্থান করে মধু আহরণ করেন তারা। তবে এবছর দেখা যাচ্ছে তার ব্যতিক্রম। সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ এবার অনেকটা কমে গেছে মৌয়ালদের। সাম্প্রতিক সুন্দরবনের বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কিছু জেলে মুক্তিপনের দাবীতে অপহৃত হওয়ায় মৌয়ালদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আবার দস্যুদের ভয়ে লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না মধু ব্যবসায়ীরাও। ফলে মৌয়াল ও নৌকার সংখ্যা অনেকটা কম এবার। দস্যু আতংকে বনে যেতে না পারায় এ বছর অনেক মৌয়াল পরিবার আর্থীক সংকটে পড়বে বলে জানা গেছে।

পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মৌয়াল ও নৌকার সংখ্যা গত বছের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। এবার পাসের সংখ্যা আশানুরূপ না হওয়ায় মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন অনেকে।

মৌয়ালদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দস্যুদের ভয়ে অনেকেই এবার মধু আহরণে যাবেন না। দস্যুর হাতে অপহরণ হলেই ছাড়া পেতে দুই-তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হয়। এ কারণে অসংখ্য মৌয়াল এবার নৌকায় পাস করেননি। তবে অনেক মৌয়াল নির্যাতন ও অপহরণের ভয় নিয়ে বনে প্রবেশ করেছেন এবার।

জানা যায়, অনেক আগে বনে ঢুকলেই বনদস্যুদের মোটা অংকের চাঁদা দিতে হতো। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বনে যেতেন মৌয়ালরা। চাঁদা দিতে না পারলে অপহরণ ও নির্যাতন করা হতো। ২০১৮ সালে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পর সুন্দরবনে নির্ভয়ে মধু আহরণ করে আসছেন মৌয়াল ও অন্যান্য বনজীবিরা। কিন্তু গত কয়েকমাস আগে হঠাৎ করে কয়কেটি বনদস্যু বাহিনীর আবির্ভাব ঘটায় তারা আতঙ্কে আছেন।

উল্লেখ্য গত ১৪ ফেব্রুয়ারী দুবলার আলোর কোলের ১৫ জেলেকে মুক্তি পনের দাবীতে অপহরণ করে নেয় জলদস্যুরা। গত ৪ মার্চ সুন্দরবনের টিয়ার চর থেকে এক জেলে এবং ৫ মার্চ শ্যালার চর থেকে এক জেলেকে অপহরণ করে বনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। এ ছাড়াও সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলে অপহরনের ঘটনা ঘটায় মৌয়ালদের মাঝে দস্যু আতংক সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব জানান, এবার বনদস্যু নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। মৌয়ালদের নিরাপত্তায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। কোনো নৌকা দস্যুদের কবলে পড়লে দ্রুত সংশ্লিষ্ট বন অফিসগুলোতে জানানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মৌয়ালদের।