শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা: সুন্দরবনের পশ্চিম অংশে, খোলপেটুয়া নদীর শান্ত বুকে অবস্থিত কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম পার্ক। খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের অধীনে পরিচালিত এই কেন্দ্রটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অনন্য দর্শনীয় স্থান। একদিকে স্থানীয় জনপদ আর অন্যদিকে বিস্তীর্ণ সুন্দরবন, মাঝে বয়ে গেছে খোলপেটুয়া নদী। নদীপথ পার হয়ে বনভূমির ভিতর দিয়ে প্রবেশ করলে পর্যটকরা দেখতে পাবেন সারি সারি বনগাছের ছায়া, বনজ প্রাণী এবং প্রকৃতির অপরূপ ছন্দ।
কলাগাছিয়া ঘাটে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়ে বানরের দৌড়ঝাঁপ। মূল অংশে ঢোকার পথে রয়েছে লোহার একটি শক্ত ব্রিজ। ব্রিজ পার হলে চোখে পড়ে কাঠের তৈরি আরেকটি সেতু, যার দু’পাশে সারি সারি খলিশা, হরকোচা ও বাইন গাছ। বনভূমির ভিতরে ঘুরে দেখা যায় বানর, হরিণ, শিয়াল, রেইনডিয়ার মাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
কলাগাছিয়ার বনাঞ্চল বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও পশুপাখির জন্য বিখ্যাত। এখানে পাওয়া যায় খলিশা, হরকোচা, বাইন, ধনুপাতা ও গমছা। প্রাণিজগৎ এর মধ্যে রয়েছে বানর, হরিণ, শিয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির বিরল পাখি ও জলজ প্রাণী। খোলপেটুয়া নদীর সুরম্য নদীমূল ও খালপথে পর্যটকরা দেখতে পান নানান প্রজাতির মাছ ও চিংড়ি, যা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে আরও উপভোগ্য করে তোলে।
কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে পৌঁছাতে হলে প্রথমে সাতক্ষীরা জেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর পথে সোহাগ, এসপি গোল্ডেন লাইন বা হানিফ পরিবহনের বাসে যাত্রা করা যায়। নন-এসি বাসের ভাড়া ৬৫০-৮০০ টাকা, এসি বাসের ভাড়া ৯০০-১৩০০ টাকা। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ বা নীলডুমুর ঘাট থেকে ট্রলারে কলাগাছিয়ায় পৌঁছানো যায়। নীলডুমুর খেয়া ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে যাত্রার সময় ২০–৩০ মিনিট, যেখানে ২০–২৫ জনের ট্রলারের ভাড়া প্রায় ৮০০–১২০০ টাকা।
পর্যটকরা থাকতে পারেন টাইগার পয়েন্ট গেস্ট হাউস, বর্ষা রিসোর্ট, সুন্দরবন হোটেল, হোটেল সৌদিয়া, হোটেল সোনার বাংলা, উৎসব বাগান, রূপসী বাংলা লজ ও আকাশলীনা রিসোর্টে। বনভূমির পাশে অবস্থিত এই রিসোর্টগুলোতে থাকার সময় নৈসর্গিক পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে নদী-আকাশের অপরূপ মিলন উপভোগ করা যায়।
সাতক্ষীরা শহরে পর্যটকরা খেতে পারেন সোনারগাঁও হোটেল, পানসি রেস্টুরেন্ট, লেক ভিউ ক্যাফে, সাদিয়া হোটেল ও স্বপ্ন রেস্তোরাঁতে। এছাড়া সুন্দরবনের নদীর মাছ, গলদা ও বাগদা চিংড়ি, সাতক্ষীরা সন্দেশ, সুন্দরবনের খাঁটি মধু ও চুই ঝালের খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম পার্ক শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার স্থান নয়। এটি শান্তি, নৈসর্গিক পরিবেশ, নদী-আকাশ-জলবায়ুর মিলন এবং বনাঞ্চলের প্রাণিকুলের সঙ্গে মিলেমিশে সময় কাটানোর এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে। পর্যটকরা ট্রলারে নদীপথে ভ্রমণ, বানরের দৌড়ঝাঁপ দেখার পাশাপাশি শিব মন্দিরে দর্শন দিতে পারেন। ওয়াচ টাওয়ারে উঠে চারপাশের বনাঞ্চলের নান্দনিক দৃশ্যমানতা পর্যবেক্ষণ করা যায়।
কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম পার্কে প্রবেশের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগের নির্দেশিকা মেনে চলা আবশ্যক। বনভূমিতে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও স্থানীয় জনজীবনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।