নান্দাইল (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা: ময়মনসিংহের নান্দাইল চৌরাস্তায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান আরসিসি ঢালাই রাস্তার গাইড ওয়াল নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের গাইড ওয়ালে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ইটের নিচে পর্যাপ্ত বালু দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এর ফলে নবনির্মিত এই গাইড ওয়ালটির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নান্দাইল চৌরাস্তা একটি অত্যন্ত ব্যস্ত এবং জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যেখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করে। প্রতি বছর বৃষ্টির পানিতে রাস্তার বিটুমিন নষ্ট হয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যাত্রী ও যানবাহন চালকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো। এই সমস্যা সমাধানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে চৌরাস্তার চারটি মোড়ে আরসিসি ঢালাই রাস্তা, পাকা ড্রেন এবং রাস্তার দুপাশে ইটের গাইড ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলেও ড্রেন ও গাইড ওয়ালের নির্মাণকাজ এখনো চলছে। এই নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট। শুধু তাই নয়, ইটের সোলিংয়ের নিচে বালু ছাড়াই গাইড ওয়াল তৈরি করা হচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় নামমাত্র বালু ছিটিয়ে দেওয়া হলেও মাটির ভিত মজবুত না করেই তার ওপর আধলা (ভাঙা) ইট ব্যবহার করতে দেখা গেছে। বালুবিহীন ও নিম্নমানের ইট দিয়ে গাইড ওয়াল নির্মাণের ফলে স্থানীয়দের মধ্যে কাজের মান নিয়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান ফকির ও শহীদ ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, "আমরা নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা মিজান ও বাবুলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় যে, ইটভাটার মালিক ভুল করে এই ইট পাঠিয়ে দিয়েছে এবং সেগুলো পরিবর্তন করা হবে। তারা বালু দিয়েই কাজ করার আশ্বাস দেন।" এরপর প্রতিবাদের মুখে আধলা ইটগুলো সরিয়ে নিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী রাকিব মিয়া নিম্নমানের ইট ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, "এক নম্বর ইটের জন্য টাকা দেওয়া হলেও ইটভাটার ম্যানেজার দুই নম্বর ইট পাঠিয়ে দিয়েছে। এর আগেও একবার ইট বদলানো হয়েছিল, এবারও এগুলো বদলানো হবে।" তিনি আরও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, "জাহিদ মিয়া নামে একজন স্থানীয় ইট বিক্রেতা আমাদের দুই নম্বর ইট কিনতে বাধ্য করছেন এবং এক নম্বর ইট দিচ্ছেন না।" তবে জাহিদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। বিষয়টি নিয়ে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সালের সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "এ ধরনের নিম্নমানের কাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।" তার এই আশ্বাসের পর এলাকাবাসী এখন কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে।