বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, সীমিত সম্পদকে কাজে লাগাতে হলে অপচয় ও দুর্নীতি কমানো ছাড়া বিকল্প নেই। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা এখন দেশের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ডেসপাস টার্মিনালে চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমাদের সড়ক নির্মাণ ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় বেশি। আবার প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে ব্যয় আরও বেড়ে যায়। এ পাইপলাইন প্রকল্প ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে দেরি হয়েছে। অথচ প্রকল্পে দেরি মানেই বাড়তি খরচ।” উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত। গ্যাসের মজুদ দ্রুত কমে আসছে, অন্য বড় কোনো খনিজ সম্পদ নেই। তাই প্রযুক্তিগত উন্নতির মাধ্যমেই এগোতে হবে। কিন্তু দুর্নীতি ও অপচয় আমাদের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে আছে। “যদি দুর্নীতি ও অপচয় কমানো যায়, তবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে বিপুল জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে।” তিনি জানান, আগে পেট্রোলিয়াম আমদানিতে মাত্র চার-পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বিড করত। এখন ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এতে বছরে ১৪০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। তার নেতৃত্বাধীন তিনটি মন্ত্রণালয়ে মোট প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে ফাওজুল কবির বলেন, “তারা কঠিন এই প্রকল্পটি শেষ করেছে। ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোতেও দ্রুত ও সাশ্রয়ী ব্যয়ে কাজ শেষ করতে হবে। দেশে অনেক প্রকল্প বছরের পর বছর ঝুলে থাকে— এমনকি ১৭-১৮ বছরেও শেষ হয়নি। এখন আর এ ধরনের প্রকল্প টেনে নেওয়া যাবে না।” তিনি আরও বলেন, দেশে প্রচুর ইঞ্জিনিয়ার বেকার বা যোগ্যতার বাইরে কাজ করছেন। স্থানীয় ভ্যালু এডিশন না বাড়াতে পারলে ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। তাই বিদেশি ঠিকাদারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে এবং নিজস্ব দক্ষ জনবলকে কাজে লাগাতে হবে। পাইপলাইনের রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেকোনো সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান করতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল মু. হাসান-উজ-জামান। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান। বক্তব্য দেন বিপিসির পরিচালক ড. একেএম আজাদুর রহমান। প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪৯ দশমিক ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত বিস্তৃত এ পাইপলাইনের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে গোদনাইল পর্যন্ত পাইপের ব্যাস ১৬ ইঞ্চি এবং গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি। ৯ কিলোমিটার পাইপলাইন গেছে নদীর ১৮ মিটার নিচ দিয়ে। এর মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ৪ লাখ লিটার ডিজেল পরিবহন করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পে মোট ২৭৮ দশমিক ৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
গ্রাম-গঞ্জ-শহর
ট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের উদ্বোধন
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, সীমিত সম্পদকে কাজে লাগাতে হলে অপচয় ও দুর্নীতি কমানো ছাড়া বিকল্প নেই