আকস্মিক টর্নেডোর আঘাতে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের অন্তত পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। এ সময় ঘর চাপা ও গাছের ডাল পড়ে আহত হয়েছে অন্তত ৩০জন। গতকাল রবিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৮টায় ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে টর্নেডো আঘাত হানে কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনয়নে। ২ থেকে ৩ মিনিট স্থায়ী টর্নেডোর আঘাতে মাঝাপাড়া, বানিয়াপাড়া, হাজীপাড়া, উত্তরপাড়া, পোদ্দারপাড়া, জিকরুল মেম্বারের পাড়া, বাবুপাড়া, চেয়ারম্যানের পাড়া, বৈরাগীপাড়া, মুন্সিপাড়া, কালিরথান গ্রামের ৫ শতাধিক কাঁচা ও আধা-পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। কয়েক হাজার গাছপালা ভেঙে পড়ে। অসংখ্য গাছ উপড়ে কিশোরগঞ্জ সড়কে পড়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় । স্থানীয় লোকজনকে সাথে নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় ৪ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে সড়ক থেকে গাছপালা সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন। এ সময় গাছ ও ঘর চাপা পড়ে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। এদেরে মধ্যে ডিসিরমোড় মুন্সিপাড়ার তাইফুল (৩০), তাসিন(২৫), রয়েল(৩০), গুলছান(৪০) ও আতিককে (২২) কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া পাকা ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে ৪টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাহিদ জানান, মুন্সিপাড়ার আব্দুল বাকীর ১টি, ঘরের দেয়াল ভেঙ্গে চাপা পড়ে চেয়ারম্যান পাড়ায় ফরহাদের ৩টি গুরু মারা গেছে। গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জোনাব আলী জানান টর্নেডোর আঘাতে তার ইউনিয়নের ১১টি গ্রাম তছনছ হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের। এছাড়া বিদ্যুৎ তার ছিঁড়ে যাওয়ায় ১১টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন লিডার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন টর্নেডোর আঘাতে সড়কে পড়ে থাকা অসংখ্যক গাছপালা অপসারণ করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দিনভর কাজ করেছেন। তাৎক্ষনিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

লালমনিরহাটে কয়েকটি গ্রাম লণ্ডভণ্ড: লালমনিরহাট থেকে লাভলু শেখ জানান, আকস্মিক ঝড়ে লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের কয়েকশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন বহু পরিবার। এসময় টিন ও ইটের আঘাতে ৩ জন ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

গতকাল রোববার (৫ অক্টোবর) সকাল ৮ টার দিকে অত্র ইউনিয়নের মধ্যে শ্রতিধর ৮ নং ওয়ার্ডে গত কয়েকদিন থেকে চলা অনবরত বৃষ্টির মাঝেই আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে শুরু হলে আধা পাকা বিল্ডিং ও কাঁচা টিনের ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। বিল্ডিং এর ইট খুলে ও টিন লেগে এসময় বাদশা মিয়া (৪০) ও মামুদ মিয়া (৭০) শহিদুল ইসলাম (৪৬) নামে ৩জন ব্যক্তি আহত হয়। আহতদের কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, মো. শাহিনুর রহমান বলেন,মাঝারি বৃষ্টি চলাকালীন সময় আকস্মিক ঝড়ের কারণে টিনশেড ঘর ও আধা পাকা বিল্ডিং ঘর বাড়ি গোডাউন ভেঙেগেছে। ওই ঘূর্ণিঝড় অল্প সময়ে স্থায়ী ছিল আরো বেশি সময় থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যা আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেত বলে তিনি জানান। ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, মধ্য শ্রুতিধর ও চর নোহালী গ্রামে অন্তত ৫০ টি পরিবারের শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. জাকিয়া খাতুন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়ার খবর তিনি শুনেছেন ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে তদন্ত টিম পাঠিয়েছেন এবং তিনি নিজেও ঘটনাস্থল সরেজমিনে যান। এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে ১১২ টি পরিবারের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিকেলে তাদের কে ৩০ কেজি করে। চাউল দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে সরকারি সহায়তা আরও দেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।