আমের রাজধানী পরিচয়ে পরিচিত রাজশাহীর আমের বাজারে এবার ধস নেমেছে। বিপুল আমদানি সত্ত্বেও ভরা মওসুমে ক্রেতা নেই। আমের দামও কম। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

এ বছর আমের ভরা মৌসুমে ঈদুল আযহার দীর্ঘ ছুটির কারণে এমনিতেই আমের দাম পড়ে যায়। আর ভরা মওসুম শুরুর মুখে বিপুল সংখ্যক মানুষ দূরবর্তী কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ায় ক্রেতার সংকট দেখা দিয়েছে। রাজশাহী কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, রাজশাহীর ৯টি উপজেলায় ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর আম বাগানের মধ্যে এক রাজশাহীর বাঘা উপজেলাতেই ৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। উপজেলায় উল্লেখযোগ্য আমের মধ্যে গোপাল ভোগ, হিমসাগার, আম্রপালি, ল্যাংড়া, তোতাপরি, ফজলি ও আশ্বিনাসহ হরেক রকম গুঠি এবং লক্ষণভোগ আম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্থানীয় আম ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে আমের উৎপাদন খুবই কম থাকায় অনেক বেশি দামে আম কেনা-বেচা হয়েছে। এ দিক থেকে চলতি বছরে আমের উৎপাদন অনেক বেশি। এ কারণে দাম কমে গেছে। তবে কেউ-কেউ বলছেন, এ বছর আমের ভরা মৌসুমে ঈদুল আযহা উদযাপন হওয়ায় আমের দাম পড়ে গেছে। এ ছাড়াও সকল প্রকার আম এক সাথে পেকে যাওয়াকেও কেউ-কেউ দায়ি করছেন। এদিকে দাম কমে যাওয়ার এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা। তারা বাগান মালিকদের নিকট থেকে একমণ আম ক্রয় করলে অতিরিক্ত পাঁচ কেজি বেশি (ঢলন) নিচ্ছেন বিনামূল্যে। এতে করে বাগান মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিন রাজশাহীর বাণেশ^র বাজারে দেখা যায়, আম ব্যাবসায়ীরা দোকান বা হাটে ভ্যানের উপর রেখে আম নিয়ে বসে রয়েছেন। তেমন ক্রেতা নেই। মাঝে মধ্য কেউ কেউ এসে দাম জিজ্ঞাসা করছেন তবে আম নিচ্ছেন না। কেউ কেউ আবার আম নিচ্ছেন খুব স্বল্প পরিমাণে। বাজারের তুলনায় উপজেলা হাট-বাজারগুলোতে আমের দাম আরো কম। যেমন লখনা ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, হিমসাগর ১৬০০-১৮০০ টাকা, ল্যাংড়া ১২০০-১৪০০ টাকা, ফজলি ১০০০-১২০০ টাকা এবং আম্রপালি ১৬০০-১৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাগান মালিকরা বলছেন, এবার ঈদুল আযহা চলাকালিন সময় লম্বা ছুটি হওয়ার কারণে মানুষ ঘরমুখি হওয়ায় ঢাকার বাজারে আমের দাম পড়ে গেছে। এ কারণে অত্র অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও ইচ্ছেমত সুযোগ নিচ্ছে। রাজশাহী পবা উপজেলার এক আম বাগান মালিক অভিযোগ করেন, গতবছর সকল আম বিক্রি হয়েছে ৪০ কেজি মণ হিসাবে। কিন্তু এবার আম ব্যবসায়ীরা একমণ আমে ৫ কেজি স্থানীয় ভাষায় ‘ঢলন’ অতিরিক্ত ফ্রি আম নিচ্ছেন। এর ফলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও বাগান মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। রাজশাহীর প্রত্যন্ত এলাকার খবর নিয়ে জানা যায়, প্রচন্ড ভ্যাপসা গরম হওয়ায় আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে ল্যাংড়া-খিরসাপাতসহ বিভিন্ন নামী দামি আম বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। তাও ক্রেতা মিলছে না। আম ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড ভ্যাপসা গরম পড়ায় লোকজন তেমন আম খেতে চাচ্ছে না। ফলে স্থানীয় বাজারে আমের চাহিদা নেই বললেই চলে। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক আম ব্যবসায়ীরা আম চাষীদের কাছে আম বাগান কিনে মোটা অংকের টাকা ধরা খেয়েছেন। তারা বলছেন, ভাল লাভের আশায় আম বাগান কিনে এখন মোটা অংকের টাকা ধরা খেয়েছেন। একজন আম ব্যবসায়ী জানান, সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে বাগান কিনে পরিচর্যাসহ অন্যান্য খরচ মিলে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এখন ওই বাগান থেকে দুই লক্ষ টাকার আম বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। প্রচ- গরমের কারণে গাছ থেকে আম এমনিতেই ঝরে পড়ছে।