কুষ্টিয়া সংবাদদাতা : সাত বছর আগে স্থাপন করা কুষ্টিয়া শহরের ৬৪ সিসিটিভি ক্যামেরা এক বছর ধরে অচল অবস্থায় পড়ে থাকলেও সেগুলো সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই সুযোগে শহরে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করলেও নির্বিঘেœ পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা।

জানা গেছে, নিরাপত্তার জন্য ২০১৭ সালের মার্চ মাসে কুষ্টিয়া শহরের থানার মোড়, মজমপুর গেট, বড়বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ ২৩ স্থানে প্রথম সিসিটিভি ক্যামেরা বসায় জেলা পুলিশ। পরে পর্যায়ক্রমে শহরতলির বারখাদা ত্রিমোহনী থেকে বটতৈলসহ ৪১টি স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়।

তখন থেকে জেলা গোয়েন্দা শাখা এসব ক্যামেরা মনিটর করায় শহরের অপরাধ প্রবণতা কমে আসে। কিন্তু গত বছরের জুলাই এসব ক্যামেরা ও সংযোগ ভেঙে ফেলা হয়। কোনো কোনো স্থানে উধাও হয়ে যায় ক্যামেরা।

শহরের বাসিন্দারা জানায়, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সড়ক ও জনসমাগমস্থলে বসানো নজরদারি ক্যামেরাগুলো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অচল রয়েছে।

এতে অপরাধ প্রবণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরবাসীর নিরাপত্তাহীনতাও বেড়েছে।

এ ব্যাপারে টিআইবি পরিচালিত সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, শহরজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকায় আগে অপরাধীরা ভয় পেত। অপরাধ সংঘটিত হলে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু এখন সিসিটিভি না থাকায় বা অচল থাকায় অপরাধীরা অপরাধ করে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে।

জেলা পুলিশ জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ক্যামেরাগুলোর বেশির ভাগ ভাঙচুর করে ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়। অনেক স্থানের ক্যামেরা উধাও হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সংস্কার বা নতুন করে ক্যামেরা বসাতে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

শহরবাসীর অভিযোগ, সিসিটিভির নজরদারি না থাকায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় হত্যাসহ মাদক কারবার, ছিনতাই ও চুরির মতো অপরাধ বেড়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের কাজটিও জটিল হয়ে পড়েছে।

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকলে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।

ব্যবসায়ী সংগঠন কুষ্টিয়া চেম্বারের পরিচালক মুক্তারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আগে শহর সিসিটিভির আওতায় থাকাকালে অপরাধ কম ছিল। কিন্তু গত এক বছরে সিসিটিভি না থাকায় অপরাধ বেড়েছে অনেক। আগে আমরা রাতের শহরে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতাম। কিন্তু এখন পারি না।’

পৌর নাগরিক অধিকার পরিষদ কুষ্টিয়ার আহ্বায়ক অ্যাড. শামিম উল হাসান অপু জেলা পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরা অপরাধীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। সিসিটিভির ফুটেজ গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই দ্রুত নতুন ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে আবারও শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে অপরাধ সংঘটিত হলেও প্রমাণ থেকে যায়। ফলে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। বর্তমানে ৬৪টি ক্যামেরা অচল থাকায় অপরাধীদের শনাক্ত করাসহ আমাদের কাজ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।’

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘শহরজুড়ে স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো না থাকায় আমাদেরকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির সামনের ব্যক্তিগত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন অত্যন্ত জরুরী। শহরবাসীর নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে জরুরী ভিত্তিতে সিসিটিভি ক্যামেরা পুনঃস্থাপনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’