এক সময়ের প্রায় মৃতপ্রায় দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা, বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতি বছর রেকর্ড সংখ্যক জাহাজ আগমনের ফলে এই বন্দর ধারাবাহিকভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দর তার নির্ধারিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২.৮৩% বেশি রাজস্ব অর্জন করেছে। এ অর্থবছরে জাহাজের আগমনও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০টি বেশি ছিল, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০টি। কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রেও ১৭.২৫% বেশি অর্জিত হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান, এই সাফল্যের পেছনে বন্দরের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং সকল অংশীজন, যেমন শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ও স্টিভেডর সহ সকল বন্দর ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের বিষয়টিকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, অভ্যন্তরীণ ব্যবসা উন্নয়ন স্থায়ী কমিটি গঠনের ফলে জাহাজ আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

চেয়ারম্যান জানান, মোংলা বন্দরে বর্তমানে কোনো জাহাজজট নেই। কন্টেইনার খালাসের জন্য টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম ১.৬৬-৪০ ঘণ্টা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে গড় টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম ৩.৩৭-৭৮ ঘণ্টা। গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য বিশেষ সুবিধা বিদ্যমান এবং পর্যাপ্ত কন্টেইনার সংরক্ষণের জন্য সাতটি কন্টেইনার ইয়ার্ড রয়েছে।

বন্দরের সহায়ক জলযান হিসেবে টাগ বোট, পাইলট বোট, মুরিং বোট, পাইলট ডিসপ্যাচ বোট, সার্ভে বোট, ড্রেজার ইউনিট ইত্যাদি সহ ৩৮টি জলযান রয়েছে। বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইএসপিএস কোড যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় এবং বিদেশি জাহাজ আগমন ও নির্গমনের সময় কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল বিদ্যমান। এছাড়া, এই বন্দর থেকে নিরাপদে ও কম খরচে সড়ক ও নৌপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য পরিবহনের সুবিধা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ১৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্দর চ্যানেলে লাইটেড বয়া ও লাইট টাওয়ার স্থাপনের মাধ্যমে দিবা-রাত্রিতে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত নেভিগেশনাল সুবিধা তৈরি হয়েছে। বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য ৪৯টি ভিন্ন ভিন্ন পয়েন্টে বার্থিং সুবিধা রয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের হিসাব তুলে ধরতে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ১২টায় বন্দর কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাহাজ আগমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০টি। এই অর্থবছরে বন্দরে ৮৩০টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০টি বা ৩.৭৫% বেশি জাহাজ আগমন করেছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮.৮০ লাখ মেট্রিক টন। এই অর্থবছরে বন্দরে ১০৪.১২ লাখ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫.৩২ লাখ মেট্রিক টন বা ১৭.২৫% বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার টিইইউজ। এই অর্থবছরে বন্দরে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪৫৬ টিইইউজ বা ৭.২৮% বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।

প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান জানান, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ হাজার ৩৮৭ লাখ টাকা। এই অর্থবছরে বন্দরে ৩৪ হাজার ৩৩৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৪৬ লাখ টাকা বা ২.৮৩% বেশি রাজস্ব আয় করেছে।

এছাড়াও, বন্দরের নিট মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরে ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বেশি আয় হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মো. মাকরুজ্জামান উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্বভার গ্রহণের পর বন্দরের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে মোংলা বন্দর পরিদর্শন করে বন্দর উন্নয়ন ও মোংলা বন্দরের কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তাদের সময়োপযোগী পরামর্শ মোংলা বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধিতে এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।