গাজীপুরের শ্রীপুরে সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষায় শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল থেকেই চলেছে প্রশাসনের টানা অভিযান। ভোরের আলো ফোটার পরপরই শ্রীপুরের সাতখামাইর বিটের তালতলী পেলাইদ ও সাইটালিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ৫৬টি অবৈধ বসতবাড়ি ও স্থাপনা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে সেনাবাহিনী, র‍্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও বন বিভাগের চার শতাধিক সদস্য অংশ নেন। অভিযানকালে পুরো এলাকা ছিল টানটান উত্তেজনায় মোড়া।

উচ্ছেদের পরে দেখা যায়, এক সময়ের সরগরম বসতির স্থান পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। অনেকে খোলা আকাশের নিচে বসে কাঁদছিলেন, কান্না আর হতাশার ছায়া ছড়িয়ে ছিল সর্বত্র।

Untitled.jpeg ২

উপজেলা প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্টের পর থেকেই এলাকায় পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষিত বনভূমি দখলের পাঁয়তারা চলছিল। কেউ কেউ দ্রুত ঘরবাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ী আসন গেড়ে বসেছিল। বিষয়টি জানার পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে ভিন্ন চিত্র ধরা পড়ে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের কণ্ঠে। উচ্ছেদের ফলে ক্ষোভ আর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকেই।

গার্মেন্ট শ্রমিক আকলিমা আক্তার ভাঙা গলায় বললেন, "দিনরাত গার্মেন্টসে কাজ করে যা রোজগার করেছি, তা দিয়েই ঘর তুলেছিলাম। আজ সব শেষ হয়ে গেল। গরিবেরই ঘর ভেঙে দিলেন!" এমন আকুতি ছিল অনেক নারী পুরুষের কণ্ঠে।

ইউএনও সজীব আহমেদ জানান, "বনভূমি রক্ষায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। ৫ আগস্টের পর থেকে পরিকল্পিত দখলের চেষ্টা হচ্ছিল। তাই আজকের এই অভিযান।"আজকের অভিযানে প্রায় ৪ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষায় এই অভিযান" ধারাবাহিকভাবে চলবে।"

ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল আল মামুন জানান, "৫ আগস্টের পর একটি চক্র শত শত অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলে।সরকারি নির্দেশ ক্রমে আমরা এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। পর্যায়ক্রমে সব উচ্ছেদ করে বনভূমি মুক্ত করা হবে।" আজ ৪ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। সামনে বর্ষা কাল তাই উদ্ধারকৃত বনভূমিতে বৃক্ষরোপন করে বনায়ন করা হবে।

কিন্তু তিনি মানবিক দিক বিবেচনায় দরিদ্র অসহায়দের জন্যে কোন বরাদ্ধের বিষয়ে কথা বলতে পারেননি।

Untitled.jpeg৩

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে?

উদ্ধারকৃত বনভূমির ভবিষ্যত সংরক্ষণের কৌশল থাকলেও উচ্ছেদ হওয়া শত শত গরিব মানুষের পুনর্বাসনের পরিকল্পনার কোনো নির্দিষ্ট ঘোষণা এখনো আসেনি। ফলে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকার বিপরীতে মানবিক পুনর্বাসনের দাবিও জোরালো হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষক মহলের মতে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধুমাত্র জমি উদ্ধার নয়, একইসাথে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাও। ভূমিহীন এসব অসহায় মানুষদের পুনর্বাসন ছাড়া উন্নয়ন কিংবা আইন প্রয়োগের সফলতা পূর্ণতা পাবে না।

গাজীপুরের ভগ্ন গৃহস্তলির ধুলার ভেতর আজ প্রশ্ন হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে—"আমরা কোথায় যাবো?"