নীলফামারীর ডোমারে নেসকোর ভৌতিক মামলায় হয়রানির শিকার সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। বিদ্যুৎবিল পরিশোধ করার পরেও জেল হাজতে যেতে হচ্ছে অনেক গ্রাহককে। ১ টি হিসাবের বিপরীতে ৩ জনের নামে মামলা। আবার অনেকের বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার পরেও মামলার ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। নেসকো কর্তৃপক্ষ বলছে মামলার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। বর্তমান সরকারের কর্মকান্ড বিতর্কিত করতে নীলফামারী জেলাসহ রংপুর বিভাগে এরকম ভৌতিক মামলায় ৫ হাজার ব্যাক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে বিদ্যুৎ আদালত। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার ডোমার উপজেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ের জন্য ডোমার ফিডারের আওতায় ৪ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহককে লাল নোটিশ প্রদান করা হয়। ওই নোটিশে নির্ধারিত তারিখে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে ব্যার্থ হলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নসহ মামলার ঝামেলার কথা বলা হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার পর অনেকে আংশিক আবার অনেকে সমূদয় বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন। অথচ নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার আগেই হঠাৎ রাতে পুলিশ এসে তাদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। পুলিশ জানায়, তাদের নামে বিদ্যুৎ এর মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে। মামলার ব্যাপারে নেসকোর ডোমার ফিডারের নির্বাহী প্রকৌশলী নওশাদ আলম জানান, বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য আমরা কোন মামলা করিনি। মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। অফিসের দেয়া লাল নোটিশ অনুযায়ী বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হচ্ছে। দৈনিক আমার দেশ এর এক অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৫, ২০২১ এবং ২০২২ সালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে মামলাগুলো করা হয়েছে। তখন ওই গ্রাহকদের কোন বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল না। আবার অনেকের বিদ্যুৎসংযোগেই নাই। অথচ তাদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ মামলাগুলোর বিপরীতে এতদিনে কোন বিদ্যুৎ গ্রাহক আদালতের কোন নোটিশ পাননি কিংবা তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। ফ্যাসিস্টের দোসর কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারীর ইন্ধনে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের টার্গেট করে সাধারণ গ্রাহকদের হয়রানি, ঘুষ বাণিজ্য, নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্কিত করতেই হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ গ্রাহকদের নামে ওই ভৌতিক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ফলে ঈদুল ফিতরের পূর্ব থেকেই চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। ডোমার থানা সূত্রে জানায়, বর্তমানে ২ শতাধিক জনের নামে বিদ্যুৎ এর মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। চিলাহাটির বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বসুনিয়া জানান, আমি পিডিবি'র কোন গ্রাহক নই, অথচ আমার নামে ২০১৫ সালের একটি মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আমাকে হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। ২৬৮৫/এ এই হিসাবের বিপরীতে রেজাউল ইসলাম, রেয়াজুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলামের নামে ১ টি করে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ হিসাবের মালিক মূলত ১ জন মাত্র। পূর্ব চিকনমাটি ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বেকারী ব্যবসায়ী সামসুল আলম জানান, আমার বিদ্যুৎ বিলের টাকা বাকি রয়েছে। লাল নোটিশ পাওয়ার পর আমি টাকা পরিশোধ করি। অথচ রাতে পুলিশ এসে আমাকে নিয়ে যায়। আমার নামে নাকি বিদ্যুৎ এর ওয়ারেন্ট রয়েছে। পরদিন অতিরিক্ত টাকা খরচ করে জামিন নিতে হয়। বড় রাউতা গ্রামের যাদব রায় জানান, আমার বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ ২০১৬ সালে বিচ্ছিন্ন করা হয়। অথচ ওই মিটারের বিদ্যুৎ বিল দেয়া অব্যাহত রয়েছে এবং আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৮ সালে আমি পুনরায় আবেদন করি তারপরেও কাজ হয়নি। নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে প্রত্যয়ন পত্র দিচ্ছে না। বর্তমানে গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ডোমার বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস আইয়ুব জানান, ইতিপূর্বে ফ্যাসিস্টের দোসর কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারীর সীমাহীন দুর্নীতি ঢাকতে তারা ভৌতিক মামলা করে। যার খেসারত সাধারণ গ্রাহকদের উপর চাপিয়েছিল। বর্তমান সরকারকে বিতর্কিত করতেই ওই ফ্যাসিস্টের দোসররা এখন এ ঘটনা ঘটাচ্ছে। নেসকোর ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে এগুলোর সুষ্ঠু বিচার এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি।