আন্তর্জাতিক মহলের চাপে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর শুধু একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র নয়, এটি জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। অতীতে বিদেশী শক্তি এই বন্দর কব্জা করে এদেশের স্বাধীনতা হরণ করেছিল—আজও একই চক্রান্ত পুনরাবৃত্তির অপচেষ্টা চলছে।’’

গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে এনসিটি টার্মিনাল আন্তর্জাতিক দরপত্র ছাড়াই বিদেশি অপারেটরের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি অভিযোগ করেন, উন্নয়নের নামে বন্দরের ওপর বিদেশি প্রভাব বিস্তারের তৎপরতা চলছে। বলেন, “আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই, কিন্তু কোনো উন্নয়নই দেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করতে পারে না। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার বন্দরের নিয়ন্ত্রণ বিদেশী শক্তির হাতে দেওয়ার যে পরিকল্পনা করেছিল, আজ তারই ধারাবাহিকতায় নতুন করে সেই কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে।”

এস এম লুৎফর রহমান আরও বলেন, বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হলে স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ্য দরপত্র আহ্বান করতে হবে। গোপন চুক্তি বা অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্দরের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর শ্রমিকসমাজ মেনে নেবে না।

শ্রমিক অধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার হরণ করেছে। “এই বন্দর শ্রমিকদের ঘাম-রক্তে সমৃদ্ধ হয়েছে, অথচ তাদের ওপর চলছে জুলুম-নির্যাতন। আমরা অবিলম্বে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার পুনর্বহালের দাবি জানাই।”

মানববন্ধনে বক্তারা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে ছিল— শ্রমিকদের আইডি কার্ডে মালিক পক্ষের নাম বাতিল, কনটেইনার ডেলিভারি শ্রমিকদের মজুরি জিসিবির শ্রমিকদের সমান নির্ধারণ, এপ্রেইজ কনটেইনার শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রদান, লেসিং-আনলেসিং শ্রমিকদের জন্য ডক শ্রমিকদের মতো কনটেইনার বোনাস চালু, অবসরকালীন ভাতা এককালীন ৬০ লাখ টাকায় উন্নীত, পোর্ট ডিউটি, ঝুঁকিভাতা ও গৃহ নির্মাণ ঋণ বাস্তবায়ন।

শেষে এস এম লুৎফর রহমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর শুধু অর্থনীতির নয়, জাতির নিরাপত্তার প্রতীক। এ বন্দর নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র আমরা বরদাশত করব না।”

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন এস এম লুৎফর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন নগর সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী। বক্তব্য দেন সংগঠনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ, তাদের মধ্যে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ নুরুন্নবী, ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মজুমদার, পাঠাগার সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম, বন্দর ইসলামী শ্রমিক সংঘের সভাপতি মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইয়াছিন ও বন্দর থানা সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম আদনান প্রমুখ।