মা ইলিশ রক্ষায় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে জেলেরা। ফলে সংসার চালাতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে দাকোপের জেলে পরিবারগুলো। মওসুমের এই সময় সহায়তা বৃদ্ধির দাবি তাদের।

দাকোপের পশুর ও শিবসা নদীতে ইলিশ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে কয়েক শ’ জেলে পরিবার। উপজেলা মৎস্য অফিসের তালিকায় ভিজিএফ কার্ডধারী জেলের সংখ্যা এ বছর ৯৫০। তবে বাস্তবতায় আরো অনেক বেশী জেলে এ পেশার সাথে জড়িত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চালনা পৌরসভাধীন ২ শতাধিক জেলে বর্তমানে পশুর নদীতে ইলিশ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। মা ইলিশ রক্ষায় সরকার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অর্থাৎ ৪ অক্টোবর থেকে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত কোন জেলে মাছ ধরতে নদীতে যেতে পারবে না।

তবে এখন নিষেধাজ্ঞার উপযুক্ত সময় না দাবি করে জেলেরা বলেন, “অধিকাংশ মা ইলিশের পেটে এখনও ডিম আসেনি। তা ছাড়া ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকারে থাকায় আমাদের মাছ তাদের জালে ধরা পড়ছে। ফলে মা ইলিশ রক্ষার উদ্যোগ খুব বেশী সফল হচ্ছে না।”

তাদের মতে ভারতের সাথে সমন্বয় করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। জেলেরা এখন ঘাটে বসে জাল নৌকা সংস্কার করে বেকার সময় পার করছেন। কর্মহীন এই সময়কালীন জেলে প্রতি সরকারী সহায়তা হিসাবে দেওয়া হবে ২৫ কেজি করে চাল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চালনা পৌরসভায় বর্তমানে শতাধিক জেলে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় আছে। অনেকের রেজিস্ট্রেশন আছে কিন্তু কার্ড পাইনি তারা মৎস্য অফিস থেকে দেওয়া স্লিপের মাধ্যমে এই সহায়তার আওতায় আসবে বলে জানা গেছে। জেলেদের অভিযোগ কার্ড পেতে তাদের পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ।

চলমান নিষেধাজ্ঞাকালিন কীভাবে চলে তাদের জীবন জীবিকা জানতে চাইলে চালনা পৌরসভাধীন নলোপাড়া এলাকার জেলে মুজিবর গাজী বলেন, গড়ে দিনে ৩ কেজি হারে ২২ দিনে একটি জেলে পরিবারের প্রয়োজন কমপক্ষে ৬৬ কেজি চাল। এ ছাড়া বাজার খরচসহ পরিবারের অন্যান্য চাহিদা মিটাতে আমাদের কয়েক হাজার টাকা ঋণ হতে হয়।

একই এলাকার জেলে হাসমত খলিফা বলেন, পেটের দায়ে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে আইন অমান্য করে মাছ ধরতে যায়। সরকার যদি নিষেধাজ্ঞা কালীন সময়ে জেলে প্রতি ৫০ কেজি হারে চাল এবং অন্তত ১ হাজার করে টাকা দেয় তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে কোন মতে চলতে পারতাম। জেলেদের ভাষায় ইলিশ ধরা প্রতিটি নৌকাকে বলা হয় সাবাড়। অর্থাৎ নৌকা বা প্রতি সাবাড়ে ৩ থেকে ৪ জন জেলে থাকে। মওসুমের শুরুতে জাল নৌকা অন্যান্য সরঞ্জাম মিলে একটি সাবাড় নামাতে খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা। এর পুরোটাই তারা ধার দেনা করে শুরু করে। স্থানীয় নদ নদীতে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যায় তাতে কোন মতে সংসার চলে না, এমন দাবি করে তারা বলেন বছর শেষে আমাদের সমিতি বা মহাজনি দেনায় ডুবে থাকতে হয়। সরকার জেলেদের পুনর্বাসন এক কালীন জাল সরবরাহ করলে এ অঞ্চলের জেলেরা ঘন ঘন পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হত না। এমন দাবি করে বাবুল শেখ বলেন, প্রকৃত জেলেদের স্বচ্ছ তালিকা করে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় এনে পুনর্বাসন করার দাবি আমাদের।

ইলিশের মওসুম শেষ হলে তারা কি করেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সুব্রত মন্ডল জানায়, বছরের বাকী সময় তারা বেড় জাল অথবা ভোলা ফেসা মারা জাল দিয়ে মাছ ধরেই সংসার চালায়।

দাকোপ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাস বলেন, দেশের অন্যান্য এলাকা অপেক্ষা দাকোপের জেলেরা আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল, এরপর ও আমরা নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রকৃত জেলের সংখ্যা নির্ধারণে আমরা তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। আর নিষেধাজ্ঞাকালীন দেওয়া সহায়তা অপ্রতুল বিবেচনায় নিয়ে চালের পাশাপাশি ডাল এবং তেল দেওয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে।