ফেনী সংবাদদাতা : ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রচ- তাপদাহ ও দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টির কারণে সুপেয় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। ফলে ফেনী জেলায় প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৮৬টি নলকূপে এখন আর পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এতে জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। নলকূপ, পুকুর, খাল-বিল কোথাও পানি নেই।

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ফেনী জেলায় সরকারি নলকূপের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৮১১টি। এর মধ্যে ৯ হাজার ৮৭১টি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। চালু থাকা ২৬ হাজার ৯৪১টি নলকূপের প্রায় অর্ধেক থেকে বর্তমানে পানি উঠছে না। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত প্রায় দুই লক্ষাধিক অগভীর নলকূপেরও অধিকাংশে পানি মিলছে না।

প্রাক্কলনিক (উপ-সহকারী প্রকৌশলী) এস. এম. মাহফুজুর রহমান জানান, গত বছরের আগস্টে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৬ হাজার ৪১৫টি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২৭ হাজার ৬০০টি নলকূপ, যেগুলো এখনও পুনঃস্থাপন বা মেরামত করা হয়নি। ফলে বন্যাকবলিত এলাকায় আগেই পানির সংকট ছিল, বর্তমানে তা আরও প্রকট হয়েছে।

সরেজমিনে ফুলগাজী উপজেলায় দেখা গেছে, ৪০-৫০ ফুট গভীরতার অগভীর নলকূপগুলোতে একদমই পানি উঠছে না। প্রায় ১৫ হাজার নলকূপ অচল হয়ে পড়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা ধান উৎপাদন নিয়েও শঙ্কায় পড়েছেন।

ফুলগাজী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আরমান জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে সরকারি অগভীর নলকূপ রয়েছে ১ হাজার ৬১টি, গভীর নলকূপ ১ হাজার ১৮৮টি এবং সাবমার্সিবল পাম্পসহ নলকূপ রয়েছে ৮৮৭টি। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার নলকূপ। এসবের প্রায় ৭০ শতাংশই এখন পানি দিতে পারছে না। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় একমাত্র ভরসা বৃষ্টি।

জি.এম.হাট ইউনিয়নের কুলসুম আক্তার শরিফা জানান, তাদের গ্রামের কাজী বাড়ির ১১টি পরিবারের মধ্যে পাঁচটি পরিবার গভীর নলকূপ ব্যবহার করে, তবে কোনো নলকূপেই মিলছে না সুপেয় পানি।

এই ইউনিয়নের শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা আনিস জানান, গ্রামের ৩৫টি গভীর নলকূপের একটিতেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটি ওয়ার্ডেই একই চিত্র। খোকন চন্দ্র পাটোয়ারী নামের আরেকজন জানান, ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব গভীর নলকূপটি তিন বছর ধরে অকেজো। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে।

সোনাগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতেও দেখা দিয়েছে একই রকম পানির সংকট। ফলে মানুষ পুকুর বা ডোবার অস্বাস্থ্যকর পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

এছাড়া দাগনভুঞা উপজেলায় কিছু নলকূপে লবণাক্ত পানি উঠায় তা পান করাও সম্ভব হচ্ছে না।

ফেনী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিউল হক বলেন, অনাবৃষ্টি ও অতিরিক্ত গরমের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে নেমে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষিকাজে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, বৃষ্টি হলেই পানি স্তর আবার উপরে উঠে আসবে।

ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল এলাকাগুলোর নলকূপ চিহ্নিত করে সেখানে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।