DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

গ্রাম-গঞ্জ-শহর

সুরমার মরাকান্না কারো কানে পৌঁছায় না

অবাধে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন ॥ হারাচ্ছে নাব্য

উত্তর সুরমা ও দক্ষিণ সুরমা নামে সিলেট নগরীকে বিভক্ত করেছে সুরমা নদী। কিন্তু একসময়ের খরস্রোতা সুরমা তার যৌবন হারিয়ে ফেলেছে। সুমরা নদীর দুইপাড় থেকে ময়লা, আবর্জনা, বর্জ্য, প্লাস্টিক ও পলিথিনে সয়লাব হয়ে গিয়েছে সুরমা নদী।

সিলেট ব্যুরো
Printed Edition
p8b

কবির আহমদ, সিলেট ব্যুরো: উত্তর সুরমা ও দক্ষিণ সুরমা নামে সিলেট নগরীকে বিভক্ত করেছে সুরমা নদী। কিন্তু একসময়ের খরস্রোতা সুরমা তার যৌবন হারিয়ে ফেলেছে। সুমরা নদীর দুইপাড় থেকে ময়লা, আবর্জনা, বর্জ্য, প্লাস্টিক ও পলিথিনে সয়লাব হয়ে গিয়েছে সুরমা নদী। বর্ষাকালে ড্রেনের পানি সুরমা নদীতে গড়িয়ে পড়ার কথা থাকলেও উল্টো নদীর পানি নগরীর বিভিন্ন ড্রেন দিয়ে প্রবেশ করে পানিতে তলিয়ে যায় নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একসময় স্রোতস্বীনি এ নদীকে ঘিরেই চলতো সিলেটের ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবন-জীবিকা। পাল টাঙিয়ে ভাটিয়ালি গান পরিবেশন করে নৌকার মাঝিরা একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেত। কিন্তু এখন আর সেই যৌবন নেই সুরমার। ফুলে ফেঁপে ওঠেছে তলদেশ। কমেছে নাব্য। সিলেট নগর অংশে দখলদারিত্ব কিছুটা কমলেও কমেনি দূষণ। নদীর দুইপাড় থেকে সমানতালে ফেলা হয় বর্জ্য। যেখানে জনবসতি ও বাণিজ্য স্থাপনা বেশি সেখানে দূষণও বেশি। প্রভাবশালীরা সুরমার দুই পাড়ের বিভিন্ন জায়গা দখল করে অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

সুরমা নদীতে বিশেষ করে বর্জ্যরে সাথে ফেলা পলিথিন ও প্লাস্টিকে মরছে সুরমা। সেই মরাকান্না পৌঁছায় না যথাযথ কর্তৃপক্ষের কানে। পলিথিনের স্তর পড়েছে নদীর তলদেশে। ফলে গেল বছর সুরমা খনন করতে গিয়েও বেগ পেতে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। পরিবেশবাদীরা বলছেন, সুরমাকে রক্ষার দায়িত্ব যাদের তারা চোখ-কান বন্ধ রাখায় নদীটির এই দুর্দশা কারও কাছে পৌঁছায় না।

সিলেট নগরীর পানি নিষ্কাশন হয় ১১টি ছড়া ও খাল দিয়ে। সবকটি ছড়া-খাল নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এসে পতিত হয়েছে সুরমায়। প্রতিদিন নিষ্কাশিত পানির সাথে বিপুল পরিমাণ পলিথিন ও প্লাস্টিক এসে পড়ে সুরমায়। শুষ্ক মৌসুমের চেয়ে বর্ষায় এই দূষণ বেড়ে যায়। তবে শুষ্ক মৌসুমে বেড়ে যায় দুই পাড়ের দূষণ। নদীর তীর শুকিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ভাগাড় বানিয়ে ফেলা হয় আবর্জনা। এতে নদীর তীরে স্তুপ হয়ে থাকে প্লাস্টিক ও পলিথিন। বৃষ্টি ও বাতাসে সেই পলিথিন গিয়ে নদীর পানিতে পড়ে তলদেশে জমাট বাঁধে। এতে পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হয়ে বিভিন্ন স্থানে জেগে ওঠে চর। বর্ষার স্রোতস্বীনি সুরমা শুষ্ক মৌসুমে পরিণত হয় সরু নালায়।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে সিলেট নগরীর ঝালোপাড়া, মাছিমপুর, তোপখানা, বেতেরবাজার, কাজিরবাজার, শেখঘাট, কুশিঘাট, টুলটিকর, টুকেরবাজারসহ নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে ময়লা আবর্জনার স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে জমে আছে পলিথিন ও প্লাস্টিক। অপঁচনশীল এসব পলিথিন ও প্লাস্টিক গড়িয়ে পড়ছে নদীতে। নগরীর ঝালোপাড়ার ব্যবসায়ী মাছুম আহমদ জানান, বাজারের অনেকেই ময়লা আবর্জনা নদীর তীরে ফেলে থাকেন। এতে কেউ বাধা দেয় না। বৃষ্টি হলে আবর্জনাগুলো নদীতে চলে যায়। আবর্জনার মধ্যে পলিথিনের পরিমাণই বেশি থাকে।

কোন এক সময় সারাবছর সুরমা নদীতে জেলেদের মাছ ধরতে দেখা গেলেও এখন সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। টুকেরবাজারের বাসিন্দা সাকির আলী জানান, আগে এলাকার অনেক মানুষ জাল ও বর্ষি দিয়ে সুরমা নদী থেকে মাছ ধরতেন। মাছ ধরে অনেকে জীবিক নির্বাহ করতেন। এখন নদীতে মাছের দেখাই মিলে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা জানান, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সুরমার ১৫.৫ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে নদীর তলদেশে পলিথিনের স্তর থাকায় খনন কাজ ব্যহত হয়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, সুরমা নদীর তীর পরিচ্ছন্ন রাখতে সিলেট সিটি করপোরেশন কাজ করে যাচ্ছে। এরপরও সচেতনতার অভাবে নগরবাসী যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখে। এতে নদীর পরিবেশ-প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্যা হেরিটেজ এন্ড এনভায়রনমেন্ট’র প্রধান নির্বাহী আবদুল হাই আল হাদী জানান, সুরমা রক্ষার দায়িত্ব পাউবো, সিটি করপোরেশন ও সাধারণ জনগণের। কিন্তু সবাই রক্ষার দায়িত্ব পালন না করে দূষণের খেলায় মত্ত। সুরমা নদীকে পলিথিন ও প্লাস্টিক মুক্ত করতে নগরবাসী আন্তরিক হতে হবে।