মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান, মোংলা থেকে: শীতের আগমনের আগেই বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ভ্রমণপিপাসু মানুষের পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যেমন পর্যটকরা ছুটে আসছেন, তেমনি বিদেশী দর্শনার্থীর সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। বনের নীরব অথচ আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণীর চলাফেরা এবং নদীনির্ভর পরিবেশ পর্যটকদের মুগ্ধ করে রাখছে প্রতিনিয়ত। তাদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশ নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিদিনই শত শত মানুষ বন এবং বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক বিচরণের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে সুন্দরবনের দিকে ছুটে যাচ্ছেন। শীতের মৌসুম ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পর্যটকদের ভিড় আরও বেড়েছে। মংলা থেকে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার করমজল পর্যটন কেন্দ্রটি কাছে হওয়ায় পরিবার, ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি হারবাড়িয়া, নীলকমল ও হিরণ পয়েন্টসহ অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানেও পর্যটকদের ঘোরাঘুরি চোখে পড়ছে।

পর্যটকদের অনেকেই জানান, বনজীবনের স্বাভাবিকতা তারা খুব কাছ থেকে অনুভব করছেন। কেউ হরিণের অবাধ বিচরণে মুগ্ধ, কেউবা কুমির কিংবা বানরের আচরণ দেখে বিস্মিত। এক পর্যটক বলেন, “বানরগুলো কখনও কখনও কাছে এসে একটু ঝামেলা করে, তবে এগুলোই আসলে ভ্রমণের মজা।”

এক ক্ষুদে পর্যটক হাসিমুখে জানায়, “আমি কুমির দেখেছি, লাল কাকড়া দেখেছি। খুব ভালো লাগছে।”

মোংলা করমজল রুটে জালি বোট পরিচালনাকারীরা জানান, পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামলাতে প্রায় হাজারের বেশি নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যটক প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন এবং তারা নিরাপদ ভ্রমণের সুযোগ দিতে সদা প্রস্তুত।

পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ। সুন্দরবন জোনের মিডিয়া মুখপাত্র ব্রজ কিশোর পাল জানান, “লাইফ জ্যাকেট ছাড়া কোনো যাত্রীকে নৌযানে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। অতিরিক্ত যাত্রী বহন বন্ধে কঠোর নজরদারি ও অভিযান চালানো হচ্ছে।”

বন বিভাগ মনে করছে, ডিসেম্বর মাসে পর্যটক সমাগম আরও বৃদ্ধি পাবে। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, “মংলা থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে করমজল হওয়ায় দর্শনার্থীরা খুব সহজে এখানকার প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন। প্রায় দুই কিলোমিটার হাঁটার পথ দিয়ে বনের ভেতরের চিত্র দেখার সুযোগ রয়েছে। এখানে কুমির প্রজনন কেন্দ্র, হরিণ ও বানরসহ বিভিন্ন প্রাণীর আবাস। ফলে পর্যটকরা সুন্দরবন সম্পর্কে একটি সমগ্র ধারণা নিয়ে যেতে পারেন।”

প্রতিবছর গড়ে দুই লাখ দেশি বিদেশী পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। বন বিভাগের প্রত্যাশা, এবার সেই সংখ্যা পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণে পৌঁছাতে পারে।