কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে আব্দুল মজিদ : এক সময় সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুরের গ্রাম-গঞ্জে বহু তেঁতুল গাছের দেখা পাওয়া যেত। প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো তেঁতুল গাছ একটা ওষুধি গাছ। প্রাচীনকালে তেঁতুল গাছের পাতা টক রান্না করে খেত। তেঁতুল কথাটির নাম শুনলে জিবহায় পানি চলে আসে । পেট ফাঁপা, কোষ্ট-কাঠিন্য সহ পেটের বিভিন্ন অসুখ হলে তেঁতুলের কাঁচা পাতার রস খেত। আর উঠতি বয়সের ছেলে- মেয়েরা কাঁচা তেঁতুল থেতু করে লবণ দিয়ে খেত, অনেকে পাকা তেঁতুল ও লবণ দিয়ে খায়। তেঁতুলের আঁচার একটি লোভনীয় খাবার। হাই পেসার রোগীদের বেড়ে গেলে তেঁতুল রস করে খেতে দিলে পেসার কন্টলে চলে আসে। এক সময় কাজিপুর উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে তেঁতুলের বিচি কেনার ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিচি কিনতো। তখন প্রতি কেজি বিচি বিক্রি হতো ১৫-২০ টাকা। তেঁতুলের বিচি থেকে বিস্কুট-ও বিভিন্ন ওষুধ তৈরি হয়।
কাজিপুরের বরইতলা গ্রামের জিলহোসেন তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন তেঁতুল গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অনেক গাছ বয়সের কারণে মারা যাচ্ছে। গত দুই যুগ আগে তেঁতুল গাছের কাঠ দিয়ে পাঝা বানিয়ে ইট, খোলা, টালী মাটির তৈরি তৈজষপত্র পোড়ানো হত। তেঁতুল গাছে অতিথি পাখি এসে বাস করতো। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে কাজিপুরের তেঁতুল আবার বাণির্জিক হিসেবে সিরাজগঞ্জ জেলা শহর সহ বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠা তেঁতুল গাছ বিভিন্ন রাস্তার ধারে বসত বাড়ির আনাছে-কানাছে এরা জন্ম নেয়, তেঁতুল গাছ বড় হলে জায়গা নেয় বেশি।
কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামের আসাদ জানান, আমার ভিটার পুকুর পাড়ে তেঁতুল গাছের-বয়স প্রায় ১০০ বছর, এক যুগ আগে এ গাছ থেকে প্রায় ২৫-৩০ মণ তেঁতুল বিক্রি করতাম, এখন পরিমাণ একটু কমে গেছে। এক সময় ১ কেজি তেঁতুলের দাম ছিল প্রায় ২০-৩০ টাকা। গত বছর প্রতি কেজি তেঁতুল বিক্রি হয়েছে প্রায় ১০০-১৫০ টাকা। তেঁতুল গাছে জায়গা বেশি নেয় বলে কেউ আর এটাকে বাঁচিয়ে না রেখে কেটে ফেলে। একটি তেঁতুল গাছ প্রায় ১৫০-২০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে ডাল পালা তেমন থাকে না গাছের আর গুড়ির ভিতরে সুরঙ্গ পড়ে যায়, একবার মারা গেলে কেউ আর নতুন করে তেঁতুল গাছ লাগায় না।