রাস্তার উপর গর্ত আর পানি দেখে দূর থেকে সড়ক মনে হয় যেন একটি পুকুর। বর্তমান খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের এমন বেহাল অবস্থা। এতে করে ঘটছে প্রতিনিয়ত ছোট বড় দুর্ঘটনা। এমনকি সাময়িকভাবে মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতেও নেয়া হচ্ছে না কোন উদ্যোগ। অল্প সময়ের ব্যবধানে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও খানাখন্দে আর বেহাল অবস্থা হওয়ায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, নি¤œমানের বিটুমিন ও নির্মাণসামগ্রী উপকরণ ব্যবহার করায় কিছুদিন যেতে না যেতেই সড়কটির এমন বেহাল অবস্থা । বর্তমানে চিত্র দেখে বোঝা যাবে না এটি পাঁচ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে সড়কটি। সড়কটির কোন কোন জায়গায় পিচ উঠে গেছে, তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। ভারী যানবাহন চলতে চলতে কোথাও কোথাও সড়কের দুই পাশের পিচ নেই গেছে। এতে সড়কের ওপর ঢেউয়ের মতো তৈরি হয়েছে। আর বড় বড়, গর্তে মনে হবে যেন সড়ক এর উপর পুকুর। খুলনা সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা যায়, খুলনার জিরো পয়েন্ট থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারোমাইল পর্যন্ত মোট ৩৩ কিলোমিটার। ওই সড়কের প্রশস্তকরণ ও পুননির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। শুধু খুলনা অংশের প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৬০ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২২ সালে ২১ ডিসেম্বর দেশের ৫০টি জেলার যে ১০০টি সড়ক ও মহাসড়ক নাম করণ করা হয়।
খুলনা সওজ থেকে জানা গেছে, আগে সড়কটির প্রশস্ততা ছিল ১৮ ফুট। সংস্কার করে সেটিকে ৩৬ ফুট করা হয়। বালু পাথরসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে সড়কের গড় পুরুত্ব করা হয় তিন ফুটের মতো। এছাড়া অনেক সময় পণ্য বোঝাই ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস আটকে পড়ছে সড়কের উপর। এতে করে সাধারণ যানবাহন চলাচলের হচ্ছে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও চালকদের অভিযোগ, সড়কের নির্মাণকাজে নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণেই এত দ্রুত ভেঙে পড়েছে সড়কটির অবকাঠামো। বর্তমানে কোথাও কোথাও পিচ তুলে ইট বিছানো হচ্ছে, যা জনগণের সঙ্গে প্রহসনের শামিল বলে মনে করছেন অনেকে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ৬৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে খুলনার মধ্যে পড়েছে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। ২০১৮ সালে সড়কটির প্রশস্তকরণ ও পুনঃনির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়, যার আওতায় রাস্তার প্রস্থ ১৮ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৩৬ ফুট করা হয়। তৈরি করা হয় আটটি কালভার্ট, ড্রেন ও বাসস্টপেজ। কাজটি ২০২০ সালের জুনে শেষ করে তৎকালীন প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু এক বছরের মাথায় সড়কটির অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটতে শুরু করে।
স্থানীয় ইজিবাইক চালক মকবুল হোসেনের সাথে তিনি বলেন, বর্তমান বর্ষা মওসুমে প্রতিদিন হচ্ছে বৃষ্টিপাত। আপনি এখানে অপেক্ষা করেন দেখবেন এখানে কি অবস্থা। এই সড়কে জিারোপয়েন্ট এর একটুৃ সামনে বেশ কয়েকটা গর্ত। এর মধ্যে একটি গত সৃষ্টি হয়েছে এত গভীর যে আপনার হাটু সমান উপর গর্ত। আর এখানে কোন চালক না জেনে যানবাহন চলাচলের চেষ্টা করলে পড়তে হবে গর্তে। এছাড়া বড়, কোন পণ্যবাহী ট্রাক আসলে খুব দক্ষ চালক না হলে গাড়ি নিয়ে পল্টি খেতে হবে। এছাড়া এই সড়কের কারণে আমরা খুবই কষ্টে আছি। অনেক মোটরসাইকেল আরোহী তারা না বুঝে সড়কের গর্তের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের দাবি চলাচলের জন্য সাময়িকভাবে সড়কটি মেরামত করলেও জনগণের ভোগান্তি কমবে। পরিবহন চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এই সড়কটি সংস্কার করার সময়ই সমস্যা ছিল। তখন দেখার কেউ ছিল না। ফলে এতো টাকা দিয়ে সংস্কার করেও লাভ হয়নি।
রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী মো. সেলিম জানান, এখন কোন প্রাইভেট ওই রাস্তার যেতে চায় না। যেমন কাঁদা-মাটি, তেমন ধুলাবালি। আর ভাঙ্গা-চোরার কথাতো বলাই লাগে না। শুধু জোড়াতালি দিয়ে ঠিক করে আর সরকারি টাকার শ্রাদ্ধ করা হয়।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, সড়কের দ্রুত মেরামত না হলে দুর্ঘটনা ও যানজট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই অবিলম্বে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর খুলনা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মুন্না বলেন, অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন চলাচল এবং সঠিক মান না থাকায় পুরো প্রকল্পের টেকসইতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন মালবাহী ট্রাক চলার কথা, সেখানে প্রতিদিন ৫০ মেট্রিক টনের ট্রাক চলাচল করছে।
এ ব্যাপারে খুলনা সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকোশলী মো. তানিমুল হক বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সড়কটির সংস্কার কাজের জন্য ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢালাই সড়ক নির্মাণ করার জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। খুলনা জিরোপয়েন্ট ও আঠারোমাইল এলাকায় মোট আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত এই ঢালাই সড়ক নির্মাণ করা হবে। শুধুমাত্র বর্ষার কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বর্ষা কমলে নির্মাণ কাজ করব। এছাড়া সাময়িকভাবে চলাচলের জন্য আমরা নিয়মিতভাবে কাজ করছি। ট্রাকে করে গর্ত সৃষ্টি হওয়া সড়ক ইট দিয়ে পূরণ করছি। আমরা বর্ষার কারণে পারছি না।