বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ঢাকা কেন্দ্রের বার্তা সম্পাদক জাহিদুল ইসলামকে সম্প্রতি সংযুক্তি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রে বদলি করা হয়েছে। তার এ পদায়ন নিয়ে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে নানা আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিটিভির সংবাদ আওয়ামীকরণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণ, নারী সহকর্মীদের প্রতি অশোভন আচরণ এবং মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভুয়া অনুষ্ঠান নির্মাণের মাধ্যমে সরকারি অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের পর বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকা ২০ জন কর্মীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন বার্তা সম্পাদক যোগদানের পর তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জাহিদুল ইসলাম যোগদানের পর থেকেই নিষিদ্ধ ঘোষিত সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী চট্টগ্রাম পলিটেকনিক কলেজের শারমিন সুমিসহ কয়েক জনকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। গত ১৯ জুন দুপুর বেলা শারমিন সুমি, আফরোজা চৌধুরীসহ কয়েকজনকে কাগজপত্র নিয়ে কেন্দ্রে আসতে বলেন। গেটের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মী মহিউদ্দিন তাদের পাশ ছাড়া প্রবেশে বাধা দেন এবং শারমিন সুমি তাকে জানান, বার্তা সম্পাদক তাদের কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছেন।
এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ১৭ জুন জেনারেল ম্যানেজারের অনুপস্থিতিতে অনুমোদন না নিয়েই একটি অনানুষ্ঠানিক সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আওয়ামী দোসর রিপোর্টার সুরেশ, প্রবীর পালসহ পনেরজন শিল্পী সম্মানিখাতের রিপোর্টার ও অনুষ্ঠান সহযোগী উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় চট্টগ্রামের চারজন উপদেষ্টার কাভারেজ সুকৌশলে না করা নিয়ে আলোচনা করেন। সেই অনুযায়ী রাঙামাটি, কক্সবাজার জেলায় ক্যামেরা পাঠিয়ে সমস্যা সৃষ্টির পাঁয়তারা করেন।
আরও অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামের শহরের ক্যান্টনমেন্টসহ স্পর্শকাতর এলাকায় সংবাদ কাভারেজের জন্য নিযোজিতদের নিরাপত্তা ভেটিং এর জন্য আওয়ামী দোসরদের নামযুক্ত করে গোপনে নিজ স্বাক্ষরে তালিকা পাঠিয়েছেন বার্তা সম্পাদক। যা জেনারেল ম্যানেজারের অনুমোদন ছাড়া করা হয়। এতে কেন্দ্র প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা বিব্রত হয় এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ কাভারেজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
আওয়ামী লীগের দোসর, ফ্যাসিস্ট পলাতক হাসিনার অন্যতম সহযোগী বার্তা সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম সহকারি পরিচালক আক্তার হোসেন, সুকুমার বিশ্বাস, জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক শেখ সেলিমের ক্যাডার জয়দেব বিশ্বাস, সূচয়ন পাল, চিত্রগ্রাহক শেখ আমিনুল ইসলাম, আশীষ কুমার, ইন্জিনিয়ারিং ম্যানেজার সায়েম ইবনে আকবর মিলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের পরিবেশ অশান্ত করে তুলছেন। এদের সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক হল পর্যায়ের নেতা এবং সাত থেকে দশ বছর ধরে একই স্থানে চাকরি করলেও অদৃশ্য কারণে এদের বদলি হয় না।
বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দোসর কর্মকর্তাদের দিয়ে ডাম্পিং স্টেশন বানানো এবং শারমিন সুমিসহ ফ্যাসিস্ট দোসরদের পুনর্বাসনের হীনপ্রচেষ্টায় নিজ ফেইজবুক পেইজের এক স্টাটাসে এদের শাস্তি এবং দ্রুত বদলির দাবি জানান চট্টগ্রাম মহানগর জাসাস সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ শিপন।
বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে একস্থানেই কর্মরত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলার স্বার্থে বদলি করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইল জাহিদুল ইসলাম বলেন, একটা অনুষ্ঠানের জন্য পাস নেয়া হয়েছিল। ওই সময় জিএম না থাকায় তার অনুমোদন নেয়া হয়নি। ঢাকাতেও নিউজের প্রধান তালিকা পাঠান। তবে, নিয়মিত পাসের জন্য জিএমই তালিকা পাঠোবেন।
বিষয়গুলো নিয়ে বিটিভি চট্টগ্রামের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, “কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি বা সংযুক্তির সিদ্ধান্ত বিটিভি সদর দপ্তর ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত।