বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শ্যামনগর উপজেলা শাখার উদ্যোগে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় শ্যামনগর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিলটি উপজেলার প্রধান সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে মাইক্রো স্ট্যান্ডে এসে সমাপ্ত হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শ্যামনগর উপজেলা আমীর মাওলানা আবদুর রহমান।

বক্তারা বলেন, দেশ বর্তমানে গভীর রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যে রাজনৈতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে বলেন, ফ্যাস্টিট আওয়ামী স্বৈরাচার পতনের পরে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছিলো এবং সংবিধানগত শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। এ প্রেক্ষাপটে জনগণের অভিপ্রায়কে সামনে রেখে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নানা সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন কমিশন গঠিত হয়েছে ।

বক্তারা আরও বলেন, গণতান্ত্রিক মূলনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশের মধ্যে থেকে ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হয়েছে । যদিও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের মতভেদ থাকায় একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অসম্ভব হয়েছে বলে তারা মনে করেন।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় ঐক্য এবং গণআন্দোলনের মাধ্যমে জনস্বার্থ নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই বলে জোর তাগিদ প্রদান করেন। একই সঙ্গে তারা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানান—জাতীয় স্তরে গ্রহণযোগ্য ও আইনগত ভিত্তিসহ ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ কার্যকর করার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ওই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন নিশ্চয়তা দিতে হবে।

সমাবেশে বক্তারা পাঁচ দফা দাবির কথা উত্থাপন করেন। (১) জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োজনীয় সংশোধনী গ্রহন, (২) জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা, (৩) ভোটকেন্দ্র দখল ও কালো টাকার ব্যবহার, ভোটে অপতৎপরতা ও পেশিশক্তি প্রদর্শন বন্ধ করা, (৪) পদ্ধতিগতভাবে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট ও দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরির লক্ষ্য স্থির করা এবং (৫) গণহত্যা মামলার বিচার, দুর্নীতি দমন ও রাষ্ট্রসংস্কারের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসনের পুনরাবর্তন রোধ করা। বক্তারা এ দাবি বাস্তবায়ন না হলে বৃহৎ গণআন্দোলনের পথে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য গাজী নজরুল ইসলাম, জেলা জামায়াত নেতা অধ্যাপক আব্দুল জলিল, মাওলানা আব্দুল মজিদ, উপজেলা নায়েবে আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন মাহমুদ, অধ্যাপক ফজলুল হক, উপজেলা সেক্রেটারী মাওলানা গোলাম মোস্তফা এবং সহকারী সেক্রেটারী মাস্টার রেজাউল ইসলাম, অধ্যক্ষ সাইদি হাসান বুলবুল, মাওলানা আমিনুর রহমান, অধ্যাপক গাজী আব্দুল হামিদ, অধ্যাপক মহসিন আলমসহ উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে দলের নেতারা এতে অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা জনসাধারণের প্রতি আহবান জানান যাতে সাধারণ মানুষ গণতন্ত্র ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষায় রাজনৈতিক সচেতনতা বহন করে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে উপস্থিত নেতারা কর্মসূচির সফলতার জন্য অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে নির্ধারিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে সকল স্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।