মাদক, ঘুমের ওষুধ ও চুনের পানি দিয়ে ঘরে বসে তৈরি করা মদ পান করে খুলনায় আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার থুকড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত দুই জন হলো, থুকড়া গ্রামের বাসিন্দা রেজওয়ান গাজীর ছেলে রবিউল গাজী এবং একই এলাকার বাসিন্দা জামির সরদারের ছেলে রাসেল সরদার। এ নিয়ে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এ ঘটনায় আরও কয়েকজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে খুলনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তারা তথ্য গোপন রেখে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এদিকে হাতে তৈরি করে মদ বিক্রি করা সেই কথিত হোমিও চিকিৎসক শেখ মোসলেম আলীকে (৭৮) গ্রেফতারের পর এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুদ রানা বলেন, শুক্রবার রাতে তারা দু’জনই থুকড়া বাজারে স্পীড জাতীয় এলকোহল সেবন করে। রাতে রবিউল গাজীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থা গুরুতর হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিউল গাজীর মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে সেখান থেকে বাড়ি নিয়ে আসে এবং পরবর্তীতে তার ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়।

অপরদিকে রাসেল সরদার একই দিনে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাটি চিকিৎসকদের খুলে বললে তারা তার চিকিৎসা করেন। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাসেলের শনিবার রাতে হাসপাতালে মৃত্যু হয়। সকালে তার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। তবে এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান। এদিকে পুলিশ জানায়, মাতৃশোধন হোমিও ফার্মেসি নামে গেস্খফতারকৃত কথিত হোমিও চিকিৎসক শেখ মোসলেম আলীর একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। এর আড়ালে তিনি বাড়িতে বসে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে মদ তৈরি করতেন। শনিবার গভীর রাতে ওই ফার্মেসিতে তল্লাশি করে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে করে দেওয়া হয়। এর আগেও মোসলেম আলী মদ বিক্রির অভিযোগ গ্রেফতার হন বলে পুলিশ জানান।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আবু তারেক জানান, মোসলেম আলী এ্যালকোলি নামের মাদক, ঘুমের ওষুধ ও চুনের পানি দিয়ে ঘরে বসে মদ তৈরি করতেন। তিনি বলেন, আড়ংঘাটা থানার পূর্ব বিল পাবলা মদিনা নগর এলাকার একটি ঘেরে বসে কয়েকজন সেই মদ পান করেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে ভর্তি করা হয়।

তিনি জানান, শুক্রবার রাতে একজন এবং শনিবার আরও ৪ জন মারা যান। শনিবারের মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন-বয়রা সেরের বাজার এলাকার আব্দুর রবের ছেলে বাবু (৫০), বয়রা মধ্যপাড়ার আব্দুস সামাদের ছেলে সাবু (৬০), বয়রা জংসনের বাসিন্দা গৌতম কুমার বিশ্বাস (৪৭) ও আজিবর (৫৯)। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা ব্যক্তি হলেন সনু, যিনি খুলনা মহানগরীর খালিশপুর দাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এর আগে সেই একই মদ খেয়ে শুক্রবার রাতে খুলনা পাবলিক কলেজের দ্বিতীয় গেটের সামনের বাসিন্দা তোতা মিয়া (৬০) মারা যান। স্বাভাবিক মৃত্যু ধরে তার লাশ গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।