বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পড়ে পালিয়ে যাবার দিন কয়েক লাখ মানুষকে মেরে যদি শেখ হাসিনার থাকার সুযোগ হত তাহলে সে সেটাই করত। এমন একজন ঘৃণ্য গণহত্যাকারী ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলাদেশকে নরকে পরিণত করেছে। এত হত্যাকাণ্ডের পরও আওয়ামী লীগ ন্যূনতম কোন অনুশোচনাবোধ প্রকাশ করেনি। একটা দল কতটা হিংস্র হলে এটি সম্ভব?

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর মহানগরীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনের মুখে যেভাবে পালিয়েছেন তার দায় শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাকর্মীদের। কারণ তাদের অপকর্ম, স্বৈরাচারী মনোভাব ও ফ্যাসিবাদ কায়েম এত উচ্চা ভিলাষী পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, মানুষকে হত্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। যারা এখনো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। কারণ যে নেত্রী নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে পালিয়ে যেতে পারে তারই কথায় আবার পুনর্বাসন ও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। হাসিনা ফিরে আসার যে চিন্তা করছে এই প্রজন্মের সাথে লড়াই করে এটা কখনোই সম্ভব হবে না।

জুলাই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইন উপদেষ্টার সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি আমাদেরকে নিয়মতান্ত্রিকতার বিষয়গুলো বলেছেন যে, একটি মামলা হুট করে নিষ্পত্তি করে দিতে পারেন না বা সুপারিশ করতে পারেন না। শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যদিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়নি। একটি বিপ্লব, আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থান নিয়মকানুন মেনে হয় না। সবকিছুর বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে তারা গণঅভ্যুত্থানকে ধারণ করে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

জুলাই আন্দোলন নিয়ে ঢাবি ছাত্রদল সভাপতির বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, কারো ইশারা-ইঙ্গিতে বাধ্য হয়ে বলেছেন কিনা বা কারো মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে বলেছেন কিনা এটা যথেষ্ট পর্যালোচনার দাবি রাখে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যারা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন আহত হয়েছেন এবং তারা সম্পৃক্ত ছিলেন এর সাথে বেঈমানী সূচক শব্দ। তবে তিনি ভুল স্বীকার করে নেয়ায় আমরা স্বাভাবিকভাবে নিয়েছি।

শিবির সভাপতি আরও বলেন, যারা বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতি পরিচালনা করতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চায় তাদেরকে এই প্রজন্মের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা ও ৫ই আগস্টের চেতনাকে অনুধাবন করতে হবে। তাহলে তারা বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী রাজনীতি করতে পারবেন। যারা স্বল্প সময়ের জন্য কিছু চাইবে তারা জেনারেশনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে।

রংপুর অঞ্চলের প্রতি উন্নয়ন বৈষম্য নিরসনে কাজ করার অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাবো এবং পরবর্তীতে যারা সরকার গঠন করবে তাদেরকে অনুরোধ করব এখানে শিক্ষা অবকাঠামো সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়ার জন্য। উন্নয়নের জায়গায় এখানে বেশ কিছু দুর্বলতা রয়েছে ছাত্রশিবির সুযোগ ও সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিবিরের কেন্দ্রীয় দাওয়াহ সম্পাদক হাফেজ মেসবাহুল করিম, মহানগর সভাপতি নুরুল হুদা, সেক্রেটারি আনিসুর রহমান, জেলা সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সোহেল রানা, কারমাইকেল কলেজ সভাপতি মেহেদী হাসান।

এর আগে তিন দিনের সফরে রংপুরে আসেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি। সফরকালে তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সেমিনারে অংশ নেবেন।

শহীদ আবু সাঈদের করব জিয়ারত

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দীয় সভাপতি মো জাহিদুল ইসলাম বীর শহীদ আবু সাঈদের করব জিয়ারত ও তার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। গতকাল মঙ্গবার দুপুর ১২;৪৫ মিমিটে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো জাহিদুল ইসলাম রংপুর পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। জিয়ারত শেষে বীর শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পীরগঞ্জ উপজেলার কৃতী সন্তান জননেতা রংপুর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য জননেতা মাওলনা নুরুল আমীন। এছাড়াও বীর শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্র শিবিরের অসংখ্য নেতা কর্মী।