বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এই সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট স্বচ্ছ নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। আমরা বলেছিলাম, নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, কিন্তু মনে করবেন না রোজ কিয়ামত পর্যন্ত আপনাদেরকে আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইবো।
ড. ইউনুসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনার সরকারকে লোকজন বলছে এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির দুইজন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা এবং এনসিপি সংগঠন করে। আপনি যদি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, তাদের এনসিপি মার্কা দুইজনকে পদত্যাগ করতে বলুন। পদত্যাগ না করলে আপনি বিদায় করুন। গতকাল শনিবার বিকেলে খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এর সভাপতিত্বে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির এর পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, বাগেরহাটে আততায়ীর গুলীতে নিহত তানু ভূঁইয়ার বিধবা স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক ফখরুল ইসলাম রনি, যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান প্রমুখ।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, আপনার সরকারে একজন বিদেশী নাগরিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। আপনার কি সেই আক্কেলজ্ঞান নেই। তিনি বলেন, একজন বিদেশী নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী কিভাবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান করবে। তিনি রোহিঙ্গা, মানবিক করিডোরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বিদায় করুন।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় যাদের বয়স ১৮ বছর ছিল তারা কেউই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, চার থেকে সাড়ে চার কোটি ভোটার কেউই গণতন্ত্রের স্বাদ পাননি। শেখ হাসিনা খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। জতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, আন্দোলন দমন করতে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে ১৪০০ ছাত্র জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এই গণহত্যা চালিয়েও আওয়ামী লীগের ভেতরে কোন অনুশোচনা নেই। আওয়ামী শাসনামলে লুটপাট, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, এগুলো আমার তথ্য না, এগুলো দুর্নীতি সংক্রান্ত শে^তপত্র কমিটি প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়, আর দাফন হয়েছে দিল্লীতে। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আজকের তরুণ ছাত্র যুবককে সেই ৩১ দফার এ্যাম্বাসেডর হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সমাবেশ শেষে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের শিল্পীরা সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
এদিকে কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে খুলনায় বিএনপির ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ সমবেত হয়েছেন নেতাকর্মীরা। শনিবার সকাল থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে এসেছেন তারা। রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আয়োজিত এ সমাবেশে খুলনা ও বরিশাল বিভাগ থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে সমবেত হয়েছেন। নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে সাম্প্রতিককালের বৃহত্তম এই সমাবেশে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার লক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাগম হয়। দূর দূরান্ত থেকে নেতাকর্মী আসায় দিনভর নগরীজুড়ে ছিল তীব্র যানজট। বরিশাল থেকে বৃহদাকৃতির লঞ্চেও বহু কর্মী খুলনা আসেন।
পৃথক মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিলেন মঞ্জু অনুসারীরা : পৃথক মিছিল নিয়ে তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার ্রপ্রতিষ্ঠার সমাবেশে যোগ দিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা। শনিবার (১৭ মে) বিকেল ৪টায় নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড় থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল শুরু করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে বিএনপি করি। কে আমাদের ডেকেছে, কে ডাকেনি-এজন্য আমরা কখনো থেমে থাকিনি।
জাহাজ-লঞ্চে পাড়ি দিয়ে যোগ দিয়েছেন আড়াই হাজার নেতাকর্মী : ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা’র লক্ষ্য সামনে রেখে খুলনার ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে আয়োজিত বিএনপির ‘তারুণ্যের মহাসমাবেশ’-এ অংশ নিতে জড়ো হন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত তরুণরা। এরই মধ্যে সবার আগে মাঠে উপস্থিত হন ভোলার একঝাঁক প্রাণবন্ত তরুণ।
ভোলার যুবকদের নেতৃত্বে থাকা বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের নির্দেশনায় চরফ্যাশন, লালমোহন, তজুমদ্দিন, দৌলতখানসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় আড়াই হাজার নেতাকর্মী খুলনায় এসেছেন।
কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করেছে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের তরুণ নেতাকমীরা সমাবেশে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। সকাল থেকে নেতাকর্মীরা মাঠের চারপাশে জড়ো হন। তীব্র গরমে মাঠের ভেতরে বসতে পারেননি কেউ। তারা মাঠের চারপাশে অবস্থান নেওয়া দোকানে শরবত পান করে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন।